নিউজ ডেস্ক : দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ ২৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. আব্দুল হালিম।
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে যেসব জেলায় বিনিয়োগকারী কম, সেসব জেলায় বিনিয়োগকারী বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল হালিম বলেন, ‘ব্যবসার একমাত্র উদ্দেশ্য লাভ করা হওয়া উচিত না। পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। সরকারের ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেয়ারবাজারের ভূমিকা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারমুখী হবে।’
আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমরা সমাজে বৈষম্য চাই না। আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সমাজ ব্যবস্থা চাই। দেশে আয়ের বৈষম্য রয়েছে। টেকসই অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এ বৈষম্য দূর করতে হবে।’
বিএসইসির এই কমিশনার আরও বলেন, ‘দেশের কয়েকটি জেলায় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। অন্য জেলাগুলোতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী অনেক কম। এসব জেলায় বিনিয়োগকারী বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে। উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী একেবারেই কম। একই সঙ্গে এসব জেলায় নারী বিনিয়োগকারী আরও কম। তাদেরকে শেয়ারবাজারমুখী করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বুঝেশুনে শেয়ারবাজারে আসতে হবে। কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। যারা অন্যের কথায় উৎসাহিত হয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশের শেয়ারবাজার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তবেই স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গড়ে তোলা সম্ভব।’
‘বাংলাদেশের যে ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এক্ষেএে দেশের শেয়ারবাজার অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি হলে তা টেকসই হয়। এছাড়া সব ধরনের বিনিয়োগকারী যাতে আইন অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে’, যোগ করেন বিএসইসির এই কমিশনার।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন করতে গেলে স্থিতিশীল বিনিয়োগ দরকার, যেটি বর্তমান সরকার করে যাচ্ছে। যে কোনো দেশের বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করার আগে সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য করেন। এ জন্য বিদেশে বিনিয়োগ আনতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন অনেক গ্রিন ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। এসব কারখানায় বিপুল সংখ্যক বিদেশি ক্রেতা আসছেন এবং অন্য যে কোনো কারখানার তুলনায় এখানে বেশি কাজের অর্ডার দিচ্ছেন।’
শেয়ারবাজারকে টেকসই করার গুরুত্ব অনেক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের শেয়ারবাজারকে টেকসই করতে হবে। এখানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য টেকসই অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
ডিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাজিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডিবিএর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘বিশ্বায়নের ফলে আজ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রকৃতি ও ধরণ পাল্টেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিনিয়োগের সুবিধা পেতে বাজারে আসছে। বিনিয়োগকারীর অংশগহণ বাড়ার ফলে বাজারে পণ্য বৈচিত্র্য এসেছে। এর ফলে যেমন বাজার বড় হচ্ছে তেমনি ঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে বাড়তি সাবধানতা ও সতর্কতা থাকা একান্ত দরকার। তাই আহ্বান করবো এই অনুষ্ঠান থেকে প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে সেই মোতাবেক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করে নিজেদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখুন।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, ডিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন, জিআরআই দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ড. অদিতি হালদার এবং সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।