পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব সিপিডির

নিউজ ডেস্ক : পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্ধারণ করা হয়। সে সময় মজুরি নির্ধারিত হয় ৮ হাজার টাকা।

মূল্যস্ফীতি, শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সিপিডি ৯ হাজার ৫৬৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন এই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে।

রোববার (৮ অক্টোবর) সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে ‘গার্মেন্টস খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়। এতে এই মজুরির প্রস্তাব করেন সংস্থাটির সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন ,এই মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনর্নিধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয় আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। অন্যদিকে, মালিক পক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্ন ভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনর্নির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে সামনে যেহেতু নির্বাচন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন ১২ হাজার টাকা এবং এর ওপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছেন। পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।

এর আগে পোশাক খাতে নূন্যতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ।

তামিম আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এই মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনাইটেড নেশন্সের মানবধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকের এই ন্যুনতম মজুরিকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ৬ জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের আমরা কম বেতন দিচ্ছি। ২০১৮ সালের যে মজুরির কথা বলা হলো সেটা গত ৫ বছরের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা যদি দেখি, তাহলে দেখবো সম্যকভাবে বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ৫ বছরে এটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ৪২.১ শতাংশ ফ্যাক্টরিতে গ্রেডিং সিস্টেমটাই নেই। এর ফলে ন্যুনতম মজুরি বোর্ড থেকে সিলেক্ট করা গ্রেডওয়াইজ কী তারা বেতন দিচ্ছে না? সেখানে বড় অনিশ্চিয়তা তৈরি করেছে। যদিও গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী বেতন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। বিজেএমইএ, বিকেএমিইএ এর মেম্বার না এমন কারখানায় এই নন গ্রেডিং সিস্টেমটা বেশি।

২৮ শতাংশ শ্রমিক গ্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে জানে না জানিয়ে তিনি বলেন, ৩১ শতাংশ শ্রমিক জানে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। অর্থ্যাৎ একদিকে কারখানা গ্রেড সিস্টেম ফলো করছে না অন্যদিকে শ্রমিকরা জানছে না তারা কোন গ্রেডে কাজ করছে। আবার ৩০ শতাংশ কারখানা সংশ্লিষ্টরাও এই গ্রেডিং সম্পর্কে জানে না। ২০১৯ সালের পরে যোগদান করেছে, তাদের কিন্তু ৮ হাজার টাকার নিচে পাওয়া সুযোগ নেই। কিন্তু ৪১.৭ শতাংশ শ্রমিক জানান, তাদের বেতন ৮ হাজার টাকার নিচে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি ১৭.১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে এ খাতে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি ২০২৩ সালে ৪৯.৫ শতাংশ কারখানা এমএফএস বা ডিএফএস ব্যবহার করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫০ শতাংশ। শ্রমিকদের একটা বড় অংশ নগদে চাচ্ছে তাদের বেতনটা। ৮০ শতাংশ শ্রমিকের এমএফএস অ্যাকাউন্ট থাকার পরেও কেনো তারা নগদে নিচ্ছে এইটা বড় ভাবনার জায়গা। ব্র্যান্ডগুলোরও ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অবহেলা ছিল।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ন্যুনতম বেতন নির্ধারণ হওয়ার পর গড়ে মাত্র ১২ শতাংশ ব্র্যান্ড বেতনের সঙ্গে প্রাইস এডজাস্ট করেছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীতে নতুন বেতন নির্ধারণ করা হলে ৯ শতাংশ ব্র্যান্ড সমন্বয়ে এগিয়ে আসবে।কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত হচ্ছে কী না সেটা দেখে। ২০২৩ সালে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা হয়েছে বাকি ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অধিদপ্তরের লোকজন কারখানায় গিয়ে বেতনের কথাটা বলেনি।

ক্রিশ্চিয়ান এইডের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যুনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা, বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বিকেএমইএ-এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরও ৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধ৩৫ টাকা দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু সোমবার