নিউজ ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তামাক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি) ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। ৭ বছর আগে ২০১৬ সালের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে ১ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ শলাকা সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর ওই রাজস্ব ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটকে (এলটিইউ) অপরিশোধিত অর্থ আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকাপোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ শলাকা সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর ৪৮ শতাংশ সম্পূরক শুল্কবাবদ ১ হাজার ৫৬৫ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৬ টাকা এবং ১৫ শতাংশ হারে মূসক বাবদ ৪৮৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৪ টাকা অপরিশোধিত রাজস্ব ফাঁকি পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। এ বিষয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর এনবিআর থেকে এক চিঠিতে (এলটিইউ-ভ্যাটকে অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ২ হাজার ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। ফাঁকিকৃত অর্থ আদায় করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল এবং সময়ে সময়ে অগ্রগতি সময়ে সময়ে এনবিআরকে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করে। এলটিইউ কর্তৃক দাবিনামাটি খারিজ করে দেয়।
এ বিষয়ে গত ১৪ আগস্ট এনবিআর সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলামকে আহ্ববায়ক করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যাবতীয় কাগজপত্র ও দলিলপত্র পর্যালোচনা করে গত ২৮ আগস্ট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে তলব করা হয়। এর দুই দিন পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে সোমবার (২ অক্টোবর) এনবিআর সদস্য ও বিশেষ কমিটির আহ্ববায়ক ড. মো. সহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র আরও জানায়, ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকোর ২০১৬ সালের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি সামনে আসে ২০১৮ সালে। ওই সময় ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় ভোগের বিষয়ে এনবিআরে প্রদত্ত তথ্য ও অডিটেড রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে গড়মিল দেখতে পান। এর ভিত্তিতে হিসাব করে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ তাদের হাতে আসে। এরপর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে চূড়ান্ত ডিমান্ড জারি করার পর ওই সময় বকেয়ার বিষয়টি রহস্যজনকভাবে বিএটিবি’র পক্ষে নিষ্পত্তি হয়। এরপর চলতি বছরে বিষয়টি আবারও সামনে এলে এনবিআরের বিশেষ কমিটি ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করে।