রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ও অটোমেশনের ধীরগতিতে ‘অসন্তোষ’ আইএমএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক: শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরই মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়েছে। ঋণের শর্তানুযায়ী, বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি কমানোসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷ তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এছাড়া অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অটোমেশনে ধীরগতি ও গতানুগতিক রাজস্ব আদায়ের রূপরেখায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আইএমএফ। তবে ঋণের শর্ত পূরণ করা সম্ভব বলে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

ঢাকা সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এনবিআরের ভ্যাট, কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। বৈঠক সূত্রেই এসব তথ্য উঠে আসে।

আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ ছাড়াও সংস্থাটির একাধিক সদস্য এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস নীতির সদস্য ছাড়াও এনবিআরের উইংগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আয়কর আহরণ পরিকল্পনা, নতুন আয়কর আইন ও আয়কর আদায়ে এ আইনের প্রভাব, আয়কর বিভাগ পুনর্গঠনের অবস্থা, কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট তৈরি করা, রাজস্ব প্রশাসন এবং কর ব্যয় মূল্যায়ন ফলোআপ ইত্যাদি বিষয়ে আয়কর বিভাগের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে হ্রাস ও করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ ছিল আইএমএফের ঋণ শর্তে। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগামী ৯ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকের পর তিন বিভাগের (আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস) প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চায় সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধিদল।

জানা যায়, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। পরের দুই অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে দশমিক ৫ শতাংশ ও দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ তিনটি অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আয়কর বিভাগ আইএমএফকে জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এ হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণকর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ ও করের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে বাকি পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। তবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও কার্বোনেটেড বেভারেজের করহার কমানোর পরও এ খাতে কীভাবে একই পরিমাণ আদায় হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে সন্তুষ্টিমূলক জবাব দিতে পেরেছে বলে জানা গেছে।

পৃথক বৈঠকে আইএমএফকে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ জানিয়েছে, চার উপায়ে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিগারেট খাত থেকে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।

অপর বৈঠকে শুল্ক বিভাগ তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এ হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তনের মাধ্যমে এক হাজার ২০০ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়ার তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে।

বৈঠক বিষয়ে আইএমএফের আঞ্চলিক প্রধান রাহুল আনন্দের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে যান।

জানা গেছে, পৃথক বৈঠকসমূহে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, এনবিআরে অটোমেশন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে আইএমএফ।

এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা, ইএফডি স্থাপনের অগ্রগতি, ভ্যাট প্রশাসনে সংস্কার, সম্ভাব্য কর্মসূচি, বেঞ্চমার্ক, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আইএমএফকে জানিয়েছে ভ্যাট বিভাগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি কিয়া
পরবর্তী নিবন্ধশাহজালাল হবে বিমান যোগাযোগের আন্তর্জাতিক হাব : প্রধানমন্ত্রী