নিউজ ডেস্ক : করোনা মহামারির সময় বিদেশফেরত দুই লাখ কর্মীকে ২৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে সরকার। এজন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (আরএআইএসই বা রেইজ) শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
এসময় প্রকল্প পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব সৌমেন্দ্রনাথ সাহাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভার আয়োজন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
সভায় জানানো হয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে ২০২০ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। প্রত্যাগত অধিকাংশ কর্মী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টসহ সমাজে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিপুল সংখ্যক এসব কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে সমাজে অস্থিরতাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাদের পুনঃএকত্রীকরণের (রি-ইন্টিগ্রেশন) লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় রেইজ প্রকল্পের আওতায় বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সহযোগিতার মধ্যে দুই লাখ কর্মীকে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদের আত্মকর্মসংস্থানে সহযোগিতা, ঋণ পাওয়াতে সহযোগিতা, দক্ষতা সনদ দেওয়া, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হবে।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রবাসীরা যেখানেই বিপদে পড়েন, প্রণোদনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা। শুরুতে যে পরিমাণ রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। এ প্রজেক্ট তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। প্রজেক্টটি করোনাকালে যারা ফেরত এসেছে তাদের নিয়ে শুরু করেছি। তবে আমরা ভাবছি করোনার পরেও যারা এসেছে তাদের নিয়েও কাজ করার। আমরা চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তবে আমরা শতভাগ তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি না তথ্যের ঘাটতির কারণে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর কতজন কর্মী প্রবাসে যান সেটি আমাদের তালিকায় আছে। কিন্তু কতজন ফেরত আসেন তা কিন্তু আমাদের জানা নেই, অনেকেই লাভবান হয়ে আসেন। তবে তারা হয়তো জানেন না কীভাবে কী করতে হবে। কেউ হয়তো পুনরায় প্রবাসে যেতে চান। সেসব বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করাই রেইজ প্রকল্পের লক্ষ্য। শুধু প্রণোদনা দেওয়া নয়, দক্ষতা উন্নয়নেও সহযোগিতা করবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসফেরতদের কেউ ঋণ চাইলে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে দেব। কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইলেও আমরা সহযোগিতা করবো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বিষয়ে ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা কম হওয়ায় আমরা ঋণ দিতে পারছি না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকার ফান্ড আছে। আমরা হয়তো ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এর মানে এ না, আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি না। আসলে আমরা প্রবাসীদের ঋণের চাহিদা পাচ্ছি না। তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তো একটি ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে চলতে হয়। হয়তো ঋণ পাওয়ার যেসব শর্ত আছে, সেটি কারও জন্য পূরণ করা কঠিন হয়। কিন্তু ঋণ পাচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়।
সভায় জানানো হয়, যেসব কর্মী বিদেশ গমনের পর দক্ষতা অর্জন করেছেন, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই এসব কর্মীদের রিকগনিশন অব প্রিয়র লার্নিং (আরপিএল) এর আওতায় ২৩ হাজার ৫০০ জন কর্মীকে দক্ষতা সনদ দেওয়া হবে, যা তাদের কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী কর্মীর সংখ্যা দুই লাখ। এ দুই লাখ কর্মীর প্রত্যেককে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) দেওয়া হবে। এ ছাড়া রেফারেলের আওতায় কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা পাওয়াতে সহযোগিতা করা হবে। যাতে তারা সমাজে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষণ/আর্থিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। এ লক্ষ্যে রেইজ প্রকল্প বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রত্যাগত কর্মীদের একটি তথ্য সমৃদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি হবে। গত ৪ মাসে ৫৯ হাজার জন কর্মী রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৩০ জুলাই, ২০২৩ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কর্তৃক ৩০টি জেলায় ওয়েলফেয়ার সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৩০টি সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেন্টারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইওএম বাংলাদেশ এবং সাব কনসালট্যান্ট হিসেবে আরো সাতটি বেসরকারি সংস্থা (রামরু, ওকাপ, ব্র্যাক, প্রত্যাশী, বিএসএসকে, ওয়্যারবি, কেএনইউএস) সহায়তা করছে।