নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলের অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর লেপ্রোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২ টু ২০৩০’ চলমান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ন্যাশনাল লেপ্রোসি কনফারেন্সে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিলাম। যদিও এখনো কিছু কিছু এলাকায় কুষ্ঠ রোগী আছে, যেটা চিহ্নিত করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার। আর প্রতি বছর কুষ্ঠ রোগী শনাক্তকরণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ দেশ। তবে সব কুষ্ঠ রোগী দেশের সব উপজেলা হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের একটি অপারেশনাল প্ল্যান চলমান আছে, যেখানে ৩ থেকে ৪শ জনবল কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কুষ্ঠ আক্রান্তদের সেবা দেয়া হচ্ছে। কুষ্ঠ নির্মূল কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যাতে নতুন রোগী শনাক্তকরণ ও এ রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। আমার কথা হচ্ছে, প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কী কারণে হচ্ছে এবং সেটা যেন না হয়, সেদিকে আমাদের বেশি দৃষ্টি দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, কুষ্ঠ রোগ ছোঁয়াছে – সেটা ভুল ধারণা। একটি ব্রিটিশ আইনের কারণে তাদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। কিন্তু ২০১১ সালে সেটি বাতিল করেছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুষ্ঠ রোগ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য একটা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর লেপ্রোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২ টু ২০৩০ আমরা প্রণয়ন করেছি। এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আজকের এ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০৩০ সালে কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করতে পারবো। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে আমার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার করছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম। আমরা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রায় ১০ হাজারের মতো ক্লিনিক আমরা নির্মাণ করি এবং ৪ হাজার চালু করি। এক বছরের মধ্যে সেটার সাফল্য প্রায় ৭০ শতাংশের ওপরে ছিল। মানুষের মধ্যে অনেক সাড়া পড়ে। বিনা পয়সায় সেখানে ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর সরকারে আসতে পারেনি। তখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়, স্বাস্থ্য সেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হয়। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। যে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা সম্পূর্ণ আমার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে আমরা সরকারে এসেই আবার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দিকে বিশেষভাবে নজর দিই। সফলভাবে স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন করার কারণে এমডিজি পুরস্কার, সাউথ সাউথ পুরস্কারও ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কারও লাভ করেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে আমাদের যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, সেগুলো থেকে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। বিনা পয়সায় ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি।’