বীমাখাতে বড় সমস্যা গ্রাহকের আস্থা সংকট। তবে এটি একেবারে অযৌক্তিক নয়। অনেক কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ করে না। এজন্য ভালো কোম্পানির বদনাম নিতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বীমা কোম্পানি, দাবি পরিশোধ না করায় সামগ্রিকভাবে খাতের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণে সবাইকে কাজ করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজারের নিজস্ব কার্যালয়ে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের (সিইও) বিএম ইউসুফ আলী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের (আইআরএফ) সভাপতি গাযী আনোয়ারুল হক ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন প্রমুখ। সদস্যদের জন্য দিনব্যাপী প্রশিক্ষন কর্মশালার আয়োজন করে আইআরএফ।
বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বেশ কিছু কোম্পানি গ্রাহকের বীমা দাবি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি দাবি পরিশোধ না করায়, পুরোখাতে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যে সব দুর্বল কোম্পানি আছে, তাদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারনা কোনো সমাধান নয়। কীভাবে সেগুলো মূলধারায় নিয়ে আসা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি বীমা কোম্পানি যথাসময়ে গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। এতে আস্থার সংকটে পড়েছে বীমা খাত। গ্রাহকের টাকা কোম্পানিগুলোর কাছে আমানত হিসেবে থাকে। কিন্তু অনেক কোম্পানি “ইসলামী ইন্স্যুরেন্স” নাম দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছে না। এ ধরণের কাজ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা।
তারমতে, খারাপ কোম্পানিগুলোকে ভালো করার উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো একটি কোম্পানি একদিনেই দুর্বল হয় না। যখন থেকে কোনো কোম্পানি গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করতে পারছে না, তখনই নিয়ন্ত্রকসংস্থার হস্তক্ষেপ করা উচিত। গ্রাহকের টাকা কোথায় আছে সেটি খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নানা আইন কানুনের মাধ্যমে এ খাতের শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকেও গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে।
মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, এখাতে অন্যতম সমস্যা আস্থার সংকট ও নেতিবাচক প্রচারণা। এটি একেবারে অযৌক্তিক নয়। কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। এজন্য সবাইকে বদনাম নিতে হচ্ছে। ভালো কোম্পানিরগুলোর ইতিবাচক কার্যক্রম সামনে আসছে না।
তিনি বলেন, বীমাখাতের সঠিত তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো দায়িত্ব সাংবাদিকদের। কিন্তু তার আগে এখাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। একমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব। বীমা দাবি পরিশোধ না করলে কোনো কোম্পানির পক্ষেই গ্রাহকের আস্থায় পৌছানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল লাইফে বীমা দাবির এক ঘন্টার মধ্যে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান পর থেকে এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল লাইফ ৬১ লাখ গ্রাহককে বীমা সেবার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। সর্বমোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা। লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, বলে জানান কাজিম উদ্দিন।
কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী সাংবাদিকদের বীমা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ন্যাশনাল লাইফের সিএফও প্রবীর চন্দ্র। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পপুলার লাইফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলমগীর ফিরোজ রানা এবং ন্যাশনাল লাইফে জনসংযোগ কর্মকর্তা আমির হোসেন জনি।