নিউজ ডেস্ক : বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) এর কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে। মূলত এলএনজি আমদানির মূল্য মেটাতে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি নির্বিঘ্নে ও গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। এই এলএনজি আমাদানির মূল্য পরিশোধের জন্য আইটিএফসি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা নেওয়ার জন্য সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আলোচনা সভা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রালয়ের অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের এশিয়া অনুবিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্বে করেন অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের সিনিয়র সচিব শরিফা খান। আইটিএফসি থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি কমিটি সম্মত হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিরবচ্ছিন্ন এলএনজি আমদানির জন্য অন্তত আগামী ছয় মাসের মূল্য পরিশোধ করতে আইএসডিবি গ্রুপের সদস্য আইটিএফসি-এর সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। ঋণ নেওয়ার প্রস্তবটি অনুমোদিত হলে, এটি হবে আইটিএফসি-এর কাছ থেকে নেওয়া প্রথম ঋণ।
দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে শিল্প মালিকদের অনুরোধে বিভিন্ন দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা সাধারণত চুক্তিভূক্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে এবং স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করে আসছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানিকৃত এলএনজির মূল্য পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে, এ কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত ৫ বছরে দেশে শুধু এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে দেশের পুরো গ্যাস ক্রয় বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মোট গ্যাসের ২৪ শতাংশ পাওয়া গেছে এলএনজি থেকে। অথচ ব্যয় করতে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ গ্যাসের সমান দাম। আগামী দিনে আরও তিনগুণ এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের পর এলএনজি আমদানি ১০ দশমিক ৫০ মিলিয়ন টন পার ইয়ার (এমটিপিএ) ছাড়ানোর ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে জ্বালানি বিভাগ; নতুন করে আরও বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে জ্বালানি খাত। তারা বলেন, গত কয়েক দশকে স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হলে এলএনজির ওপর এতোটা নির্ভর করতে হতো না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে পরিমাণ অর্থ আমদানিতে ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা দেশে বিনিয়োগ করা হলে দুই বছরের মধ্যে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে তারা বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।