নিউজ ডেস্ক : সৌদি আরবের সঙ্গে বিজনেস ডিপ্লোম্যাসিতে আশপাশের দেশগুলোকে টেক্কা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এরই অংশ হিসেবে টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষরকে উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় আসছেন সৌদি সরকারের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ’র নেতৃত্বে ৪০ জন শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী।
জাহাজ ভেড়ানোর পাশাপাশি কনটেইনার ওঠানামার মতো অপারেশন কাজের জন্য পুরোপরি প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে যে এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে, সরকার তাও নিশ্চিত করেছে।
আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও গত ১৪ নভেম্বর এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রেড সি গেটওয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, সৌদি সরকার রেড সি গেটওয়েকে মনোনিত করেছে। তাই তাদের সঙ্গেই আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা ইতোমধ্যেই পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আইন মোতাবেক তাদের সঙ্গে সব ধরনের আলাপ-আলোচনা শেষ করে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। সেটি ইতোমধ্যেই কেবিনেট কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২২ বছর বন্দরের নতুন এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাবে রেড সি গেটওয়ে। এ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি সৌদি প্রতিষ্ঠানই আনবে। এখাতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথম পর্যায়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এমনকি পণ্যবাহী জাহাজ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ভেড়াতে ইন্টারন্যাশনাল শিপিং লাইনসগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার সৌদি প্রতিষ্ঠানকেই করতে হবে বলে শর্ত উল্লেখ রয়েছে চুক্তিতে।
এ পদক্ষেপের কারণে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন,
আমরা বর্তমানে যে পদ্ধতিতে কার্গো হ্যান্ডেলিং করি, তারা সে তুলনায় উন্নতি প্রযুক্তি নিয়ে আসবে। সব মিলিয়ে এর মাধ্যমে আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা হবে। কেননা, কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। ফলে আমরা বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখ কনটেইনার এখানে অতিরিক্ত হ্যান্ডেল করতে পারব।
এদিকে এই চুক্তি স্বাক্ষর আয়োজন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশের বিজনেস ডিপ্লোমেসি। সৌদি সরকারের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ’র নেতৃত্বে ৪০ জন শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসবেন।
এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পাশাপাশি বে টার্মিনাল নিয়েও আগ্রহ রয়েছে তাদের। তাছাড়া এবারই প্রথম সৌদি আরবের এত বড় ব্যবসায়ী দল দু’দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছে।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশে সৌদি আরবের একটি বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ইতিহাসে প্রথম। এটিকে কেন্দ্র করে আমি যা বুঝতে পারছি যে সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত হয়েছেন এবং তারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সেই উদ্দেশ্যেই হয় তো সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রীর সঙ্গে এত বড় একটি প্রতিনিধিদল আসছে।’
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কর্ণফুলী নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে ওঠা এই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে একসঙ্গে ৩টি জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে ৫ লাখের বেশি।
৬ ডিসেম্বর চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বুঝে নেবে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে। শুধু এই বন্দরেই বিনিয়োগ নয়, বরং বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আগ্রহী সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা। এর জন্যই সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রীর সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রয়েছে ৪০ জন শীর্ষ ব্যবসায়ী।