নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছু সংবাদপত্রে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়েও ভালো বলে জানানো হয়।
আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের লেনদেন বন্ধের কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি।
এই ব্যাংকগুলোকে সতর্কতামূলকভাবে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তা ভুলভাবে পত্রিকায় উপস্থাপিত হয়েছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মত কাজের অংশ। মুখপাত্র আরও বলেন, অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের থেকে তাদের অবস্থান এখনও অনেক ভালো।
দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন, শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো ইসলামী ব্যাংককে ক্লিয়ারিং হাউস বা নিকাশ ঘর থেকে বিরত বা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কয়েকটি ইসলামী ব্যাংককে ক্লিয়ারিং হাউস বা নিকাশ ঘর থেকে বিরত বা বিচ্ছিন্ন রাখার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকাশ ঘর পরিচালিত হয় পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবে ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট ছাড়াও অন্য সব ধরনের লেনদেন যেমন: সরকারি সিকিউরিটিজ, কলমানি ইত্যাদি সম্পন্ন হয়। ফলে দিনশেষে যে কোনো ব্যাংকের স্থিতি ঋণাত্মক হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে বিডি ম্যানুয়াল ১৯৪৫-এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো দিনশেষে বা পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করে থাকে। এটি একটি চলমান এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া যা বহুদিন থেকেই অনুসৃত হয়ে আসছে।
এদিকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক,স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক জানায়, সম্প্রতি কিছু পত্রিকায় ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা বাস্তবতাবিবর্জিত এবং দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়। এসব নেতিবাচক সংবাদে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি জানায়, শুক্রবার দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কথিত চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক সম্পর্কে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাস্তবতাবিবর্জিত, অপ্রাসঙ্গিক ও অতিরঞ্জিত অনেক বক্তব্য লেখা হয়েছে, যা সত্যের অপলাপমাত্র।
দেশের ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার হীন চক্রান্ত থেকেই এসব অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করে ইউনিয়ন ব্যাংক। বেশ কিছু দিন ধরে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিথ্যাচার করে আসছে। তারল্য সংকট সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ সেসব মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রমূলক নীলনকশারই অংশ।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ জানায়, কয়েকটি পত্রিকা ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে যা অসত্য, বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের ব্যাংকিং খাত তথা অর্থনীতি অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংবাদটি বাস্তবতাবিবর্জিত ও অশুভ চক্রান্তের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
সংবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানোর যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে ইসলামী ব্যাংক সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল)
এক বিবৃতিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বলে, গত ১৫ ডিসেম্বর কিছু গণমাধ্যমে কথিত টাকার সংকট নিয়ে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্যাংকের সাথে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-র নাম উল্লেখ করে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যমূলক, অপ্রত্যাশিত, অসত্য ও বাস্তবতা বিবর্জিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা ব্যাংকিং সেক্টরের গতিশীলতাকে বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস।
আরও বলে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে কোন তারল্য সংকট নেই। আমাদের সকল কার্যক্রম ও লেনদেন নিয়মিত, স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আমানত, বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য, রেমিট্যান্স প্রভৃতি সূচকে ইতিবাচক ধারায় আছে। এ পর্যন্ত আমাদের কোনো শাখা, উপশাখা বা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের কোনো গ্রাহক ব্যাংকের কোনো শাখায়, উপশাখায় কিংবা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা উত্তোলন করতে এসে কিংবা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ফেরত এসেছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আমাদের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আহরণে বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকের তারল্যসূচক সমূহ যেমন- ঋণ আমানত অনুপাত, এল সি আর, এন এস এফ আর, লিভারেজ অনুপাত প্রভৃতি গত তিন প্রান্তিকে উন্নতি ঘটেছে।
এসবই সম্ভব হয়েছে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের সাথে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির কারণে। গত ১ বছরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য জনবান্ধব বেশকিছু আমানত প্রকল্প নিয়ে এসেছে, যা ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া আমাদের উপর আস্থার কারণে ২০২৩ সালে ৫ লক্ষ নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যাংকের আমানত বেড়ে চলেছে।
প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে আনতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবারো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আমাদের ব্যাংক ২০২৩ সালে ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো এক বিলিয়ন ডলারের উপরে রেমিট্যান্স আহরণে সক্ষম হয়েছে, গত বছরের তুলনায় যার প্রবৃদ্ধি প্রায় চারশত ভাগ এবং যা ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বোচ্চ। এটি অবশ্যই প্রবাসী বাংলাদেশীসহ গ্রাহকদের আস্থা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আমরা দৃঢ়তার সাথে আশ্বস্ত করতে চাই, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র সকল গ্রাহকের আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও নিরাপদ। তাই ব্যাংকের সকল সম্মানিত গ্রাহক ও শুভাকাঙ্খীকে এ ধরণের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
এক বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক জানায়, কয়েকটি পত্রিকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে; যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে কোনো তারল্য সংকট নেই এবং সংবাদে উল্লিখিত এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮ নভেম্বর কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। যেহেতু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি তারল্য সংকটে নেই, তাই সংবাদে উদ্ধৃত ২০ দিন সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কোনো বিষয়ই নেই। দেশের অর্থনীতির সুসংহত ধারা বজায় রাখা এবং জীবনযাত্রার উন্নত মান রক্ষার্থে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তখন এরূপ বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবে।
এর আগে শুক্রবার বেশ কিছু গণমাধ্যম জানায়, সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে (ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক) ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চলতি হিসাবের টাকার ঘাটতি পূরণ করতে বলেছে বাংলাদেশে ব্যাংক। না হলে এই ব্যাংকগুলোর লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক থাকায় এসব ব্যাংককে ২০ দিনের মধ্যে অর্থ সমন্বয়ের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।