বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় পতন

নিউজ ডেস্ক : বিশ্ববাজারে প্রথমবারের মতো এক আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ১০০ ডলার স্পর্শ করে সপ্তাহে। সোনার দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির পর অবশ্য সেই দাম ধরে রাখতে পারেনি এ ধাতুটি। রেকর্ড সৃষ্টির পর বড় পতনের মধ্যে পড়েছে সোনা। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ধাতুটির দাম প্রায় ৭০ ডলার কমেছে।

বিশ্ববাজারের মতো দেশের বাজারেও সোনার দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। ফলে দেশের বাজারেও সোনার দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য কয়েক দফা দাম বাড়ার পর গত সপ্তাহে দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৭১ দশমিক ৯৭ ডলার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ৪ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড ২ হাজার ১২৪ দশমিক ৭৩ ডলারে ওঠে। সোনার এত দাম আর আগে বিশ্ববাসী দেখেনি।

অবশ্য এ রেকর্ড দাম হওয়ার পরপরই পতনের মধ্যে পড়ে সোনা। ওই দিনই প্রতি আউন্স সোনার দাম কমে ২ হাজার ২১ ডলারে চলে আসে। অর্থাৎ একদিনেই সোনার দাম ১০০ ডলারের ওপর কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। একদিনের মধ্যে সোনার দামে এমন উত্থান-পতনও আগে কখনো দেখা যায়নি।

সোনার দামের এমন উত্থান-পতন বিস্মিত করেছে এ খাত সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, দাম বাড়বে এবং কমবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু একদিনের মধ্যে এক আউন্স সোনার দাম প্রায় ১০০ ডলার বেড়ে যাওয়া এবং কমে যাওয়ার ঘটনা আগে দেখা যায়নি। সাধারণত দাম বাড়া বা কমার পেছনে কোনো না কোনো ঘটনা থাকে। কিন্তু এবার কি কারণে এমন দাম বাড়লো এবং কি কারণেই দরপতন হলো তার কোনো কারণ খুঁছে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই এক আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ১২৪ ডলারে ওঠে। সোনার এত দাম আগে কখনো হয়নি। কিন্তু এ রেকর্ড দামের পরই আমরা আবার বড় দরপতন দেখতে পাই। একদিনের মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১০০ ডলার কমে যায়। সোনার দামে এমন অস্থিরতা আগে দেখা যায়নি। এতে আমরা বিস্মিত হয়েছি।

তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি যখন সোনার দাম বেড়েছে বা কমেছে তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ আছে। কিন্তু এবার কেন সোনার এত দাম বাড়লো, আবার কেনই বা কমলো তার কোনো কারণ জানতে পারেনি। এটা শুধু আমাদের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নয়, অন্য দেশের বিনিয়োগকারীদেরও বিস্মিত করেছে।

এদিকে একদিনে বড় উত্থান পতনের পর গত সপ্তাহের বাকি চার কর্যদিবসেও সোনার দাম কিছুটা অস্থিরতা দেখা গেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার লেনদেনের একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমে ১ হাজার ৯৯৫ ডলারে চলে আসে। তবে শেষদিকে কিছুটা দাম বেড়ে ২ হাজার ৩ দশমিক ৯৪ ডলারে থিতু হয়েছে সোনা।

এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৬৮ দশমিক শূন্য ৩ ডলার বা ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেই কমেছে ২৪ ডলার বা ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর বড় পতন হওয়ায় দেশের বাজারে গত সপ্তাহের সোনার দাম কিছুটা কমিয়েছে বাজুস। বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠক করে ৭ ডিসেম্বর থেকে দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করে।

ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২২৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৪৫৮ টাকা কমিয়ে ৮৮ হাজার ৪৭১ এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা কমিয়ে ৭৩ হাজার ৭১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে এ দামেই সোনা বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। সেইসঙ্গে ভরিপ্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০ টাকা গুনতে হতো।

এ দাম কমানোর আগে ৩০, ২৭, ১৯ ও ৬ নভেম্বর এবং ২৭ অক্টোবর সোনার দাম বাড়ানো হয়। অর্থাৎ টানা পাঁচ দফা দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটে। এতে দেশের বাজারে সোনার দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ৩০ নভেম্বর সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ হাজার ৯২৯ এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৯৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। দেশের বাজারে এর থেকে বেশি দামে আর সোনা বিক্রি হয়নি।

এমএ হান্নান আজাদ আরও বলেন, সর্বশেষ আমরা যখন দাম সমন্বয় করেছি সে সময় স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার যে দাম ছিল এখনো প্রায় তাই রয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আমরা সোমবার বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি দেখবো। যদি দাম সমন্বয়ের মতো হয়, তাহলে দাম সমন্বয় করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজনীতি যার যার, অর্থনীতি সবার: এফবিসিসিআই সভাপতি
পরবর্তী নিবন্ধপাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা