নিউজ ডেস্ক : নির্বাচনে সংঘাত বন্ধ করে জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করতে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে দলীয় প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ব্যত্যয় হলে গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়বে, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা, খাগড়াছড়ি জেলায় আয়োজিত জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ঢাকা প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ জেলার জনসভায় লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, দুইবার যারা ভোট চুরির অপবাদে বিদায় নিয়েছিল, তারা আবার ভোটের কথা বলে। ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগ দিয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকবে।
‘আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণের ক্ষতি করতে না পারে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। প্রত্যেকে জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সে নির্বাচিত হবে। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না।’
প্রার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কিন্তু সংঘাত-মারামারি কোনো কিছু আমি দেখতে চাই না। আমার দলের যদি কেউ করে, তার কিন্তু রেহাই নেই। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো।
‘আমরা চাই, জনগণ তার ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে, সে জয়ী হয়ে আসবে। গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করতে হবে। এর যদি ব্যত্যয় ঘটে, বাংলাদেশ কিন্তু শেষ হয়ে যাবে। আজকে যতটুকু উন্নয়ন করেছি, থাকবে না। নির্বাচন নিয়ে কেউ যাতে কোনো অভিযোগ আনতে না পারে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করবেন। কারণ, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কোন দল আসলো, না আসলো, তাতে কিছু যায়-আসে না। বিএনপি আসেনি একটা কারণে যে, এখানে ভোট চুরির সুযোগ নাই। ২০০৮ সালে পারেনি। এরপর থেকেই তারা নির্বাচন বর্জন করতে চায়। আমরা নির্বাচন আর জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি।
নেতাকর্মীদের দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাবে। জনগণকে সুযোগ দিতে হবে। তারা পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। তাতেই আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।
আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজ জ্বালাওপোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাস করা, এটাই তারা ভালো বোঝে। নির্বাচনে তারা আসবে না। আসবে কীভাবে, বলেন তো? ২০০৮ সালের নির্বাচনের কথা চিন্তা করেন। সেই নির্বাচন নিয়ে তো কারো কোনো অভিযোগ নেই। ওই নির্বাচনে ফলাফল কী ছিল? সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩টি আসন। এই কথাটি সবার মনে রাখতে হবে। এখন তারা বড় বড় কথা বলে। ভোটের কথা বলে। ওরা ভোটের কী বোঝে?
তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে; সেনা আইন লঙ্ঘনকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, হ্যাঁ-না ভোট, জনগণের ভোট চুরি করেছে। ক্ষমতায় বসে থেকেই একসাথে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান আবার নির্বাচনও করেছে। সেই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে বেরোলো বিএনপি। কাজেই তাদের কাজের সবকিছুই অবৈধ। তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে মনে করে না। তা না হলে রেলে আগুন দিয়ে কীভাবে মানুষ পোড়ালো?
‘একটা মা তার ছোট বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য বুকে ধরে রেখেছে। সেই অবস্থায় মরে কাঠ হয়ে গেছে। বাসের ভেতরে হেলপার ঘুমিয়ে আছে। আগুন দিয়েছে হেলপার পুড়ে শেষ। ২০১৩, ২০১৪ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ছেলেকে বসিয়ে রেখে বাবা গেছে পানি আনতে, আগুনে ঝলেসে গেছে ছেলে। এইভাবে সারা দেশে তারা তাণ্ডব করেছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এখন আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। বাসে-রেলে আগুন দিচ্ছে।’
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশে ফেরার কথা জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ আজ এখানে।
এজন্য লাখ লাখ নেতাকর্মীর ত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সামাজিক নিরাপত্তাবেস্টনীর আওতায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ কোটির মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকৃত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ভাতার মাধ্যমে মানুষকে ভালো রেখেছি। আরও ৪ কোটির বেশি মানুষ কাজের বিনিময়ে ভাতা পাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। শিক্ষা খাতে উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আমি মনে করি, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া একটি দেশ উন্নতি করতে পারে না।
ডিজটাল বাংলাদেশের পর এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী প্রজন্ম হবে প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার।
আগামীতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি সব নষ্ট করে। কিছু লোক আঙ্গুল কলাগাছ হয়। আর সৎভাবে যারা জীবনযাপন করে, তাদের কষ্ট হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স আমরা ঘোষণা দেবো। সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা এবং মানুষের জীবন উন্নত করাই লক্ষ্য।