নিজস্ব প্রতিবেদক: আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন সুদহারের যে নির্দেশনা ছিল তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী আমানত জমা নিতে পারবে।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এক সার্কুলারের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ওই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট জারি করা সার্কুলারের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সুদহারের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন মেয়াদি আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে না রাখতে বলা হয়েছিল। ওই সময়ে ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। কিন্তু এখন আর ঋণের ক্ষেত্রে ওই সীমা নেই। এ বছরের জুলাই থেকে ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তাই আমানতের ক্ষেত্রেও সুদহারের সর্বনিম্ন সীমার দরকার নেই। এ কারণে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট-এর ওই নির্দেশনা রহিত করা হলো।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি টানা বাড়ছিল। এখনো তুলনামূলক বেশি আছে মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ৫-৬ মাসে ১২ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সবশেষ নভেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সংকট সামাল দিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনো তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সবশেষ নভেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে এখন সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ডিসেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ছয় মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না।
নভেম্বরে মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ডিসেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। সেই হিসেবে, চলতি ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ নেওয়া যাবে।
গত মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে বড় অঙ্কের ঋণে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
তবে ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংকগুলো নিতে পারবে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়া সুযোগ রয়েছে। যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে।
আর ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান-এনবিএফআই। সেই হিসেবে ডিসেম্বর মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।