কক্সবাজার প্রতিনিধি : টানা দুদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছেন। এ কয়দিনে পর্যটন খাতে ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় পর্যটন মৌসুমের। এবারের মৌসুম শুরু হতে না হতেই ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি পর্যটন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। ফলে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন পর্যটন খাতের সব অনুষজ্ঞ মিলে কমপক্ষে গড়ে ১০-১৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, পর্যটনের অন্ধকার যাত্রায় আলো হয়ে আসে কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর রেলপথ যোগাযোগ। ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজারের পথে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় প্রতিদিনই কয়েকশ পর্যটক আসা-যাওয়ায় রয়েছে। যদিও প্রায় ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সংখ্যা অতি নগণ্য।
তবুও বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৪-১৬ ডিসেম্বরের হোটেল-মোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলসহ কক্সবাজারে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব আবাসিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকিং। এছাড়া ১৫-১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলোতেও কোনো টিকিট নেই। সবমিলিয়ে চলমান অবরোধে ধরা ক্ষত কিছুটা পোষানোর স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারে পর্যটনের ভরা মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটনশূন্য যাচ্ছে কক্সবাজার। তবে-কিছুটা আশা জাগাচ্ছে বিজয় দিবস। ১৪-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের ৮০-৮৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বুধবার থেকে কক্সবাজারে অর্ধলাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। বিজয় দিবস নিয়ে এটি লাখ-দেড়েকে দাঁড়াতে পারে। তবে সবাই পর্যটক নয়-দর্শনার্থীও থাকবেন।
কাশেম সিকদার আরও বলেন, অবরোধের কারণে শুধু গেস্ট হাউজ-হোটেল সেক্টরে প্রতিদিন কর্মচারী বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জেনারেটরসহ কমপক্ষে গড়ে ৫০-৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। সেই হিসাবে আবাসন খাতেই দিনের খরচ বাবদ লোকসান কয়েক কোটি টাকা।
সৈকতে ডুবে যাওয়া পর্যটক উদ্ধারে কাজ করা সি সেইফ লাইভ গার্ডের সুপারভাইজার মুহাম্মদ ওসমান জানান, বৃহস্পতিবার হাজারো পর্যটকের পদভারে মুখরিত ছিল সৈকত। কেউ গোসলে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটতে। কেউবা কিটকটে শুয়ে সমুদ্র দেখছে। কেউ জেটস্কি নিয়ে ঢেউ ভাঙছে, চড়ছে ঘোড়ায়। আবার অনেকেই ছুটছে বিচ বাইক নিয়ে। শিশুরাও আপন মনে খেলছে।
কলাতলীর পাঁচ তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক মৌসুমে নিয়মিত আসে। তবে একে মৌসুমের পর্যটক বলা যাবে না। টানা ছুটিতে এমনিতে এখানে লোকজন আসে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন তাদের সেমিনার, সভাসহ নানা বার্ষিক কাজ করতে একত্র হয়েছে। তাদের পর্যটক বলা যাবে না। তবুও বলা যায় অবরোধ পর্যটন সেক্টরে যা ঘা তৈরি করেছিল সেই ঘায়ে কিছুটা প্রলেপ দিচ্ছে বিজয় দিবস।
হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, গেল বিজয় দিবসে পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও এবার সেটি অর্ধেকে নেমে আসবে। এবার বিজয় দিবসের দিন কক্সবাজারে কমপক্ষে দেড়লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম, পর্যটক সেবায় কক্সবাজার শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০ রেস্তোরাঁ রয়েছে। একেকটি রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন গড় ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ। অথচ অবরোধে বিকিকিনি হচ্ছে হাজার দশেক টাকা। প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিজয় দিবসে ক্ষতির কিছুটা পোষাতে পারে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, অবরোধে ক্ষতিতে পড়া পর্যটন শিল্পে রেল যোগাযোগ বাড়ানো আশীর্বাদে রূপ নিতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে রেল আসলে ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটন শিল্প। ১৫-১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকের ভরপুর থাকবে। বিজয় দিবসের পর থার্টিফাস্ট নাইটেও সৈকতে পর্যটক সমাগম বাড়তে পারে।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, পর্যটন মানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁ নয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণপরিবহন, জাহাজ, ট্যুর অপারেটর, দর্শনীয় স্থানসহ পর্যটন সেবায় যুক্ত সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গেল ৪৭ দিনে সবখাতেই লোকসান হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, অবরোধে গণপরিবহন বন্ধ, তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কক্সবাজারে আসতে পারছে না বলেই পর্যটনে ধস নেমেছে। গত দেড় মাসে পর্যটন অনুষজ্ঞ সেক্টরে প্রায় ৫-৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ থেকে উত্তোরণের উপায় হলো কক্সবাজারে রেলের সংখ্যা বাড়ানো এবং সারাদেশকে যুক্ত করা। রেল চালু হওয়ার পর মাত্র ৫০০-৬০০ জন পর্যটক আসার সুযোগ পাচ্ছে।