নিউজ ডেস্ক : এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার নতুন ভোটার। এখনকার তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা আছে কিন্তু রাজনীতি নিয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াইয়ে আগ্রহ নেই।
বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিশ্বাস করে এবারে নির্বাচন কোন সহিংসতা হবে না এবং তারা তাদের ভোটটা দিতে পারবে। তবে আরও দলের অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচন উৎসবমুখর হতো বলেও তাদের বিশ্বাস। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন ভোটারদের অন্যতম চাওয়া বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমুক। তারা বর্তমান সরকারের করা সার্বিক উন্নয়নে খুশী এবং এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক সেটাও চায়।
তবে, অভিযোগও আছে বিস্তর। তাদের অনুভূতি, ভোটে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের চাওয়া পাওয়া গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না, তাদের সঙ্গে আলাপের প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে তারা চান আগামী ৭ জানুয়ারির আগে ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলো তাদের সঙ্গে নানান পরিসরে আলাপ করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর একমাসও বাকি নেই। ক্যাম্পাসে চায়ের আড্ডায় তরুণদের আলোচনায় বিষয়- কী হতে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারি। ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে এবার নতুন ভোটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার। বিপুল সংখ্যক এই তরুণ এবার প্রথমবারের মতো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের কর্মী বলেন, ‘আমরা তরুণ সমাজ এখন আর হামলা নিপীড়নের রাজনীতি পছন্দ করি না। সব মানুষ ও তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে রাজনীতি আছে। আমরা আমাদের চাহিদার জায়গাগুলো পূরণের আশ্বাস চাই, একটা ভালো জীবন কীভাবে উপার দিবে রাষ্ট্র সেই নিশ্চয়তা চাই। দিনের পর দিন রাজনীতির নামে যে অগ্নিসন্ত্রাস সেসবকে তরুণরা পছন্দ করে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘সার্বিক ও ব্যক্তি উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে আরও সুযোগসুবিধা দেওয়া হোক। আমাদের আর অন্য কোন দাবি নেই। আমাদের উচ্চশিক্ষার বিষয়টি যেনো আরও সহজ করে দেওয়া হয় আমাদের সামনে সেটাই আমাদের চাওয়া। আমরা এবার প্রথম ভোট দিব, বন্ধুদের মধ্যে উত্তেজনা আছে।’
এই তরুণ ভোটারদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। কেউ কেউ হয়তো সদ্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। তাদের কাছে গত ১৫বছর বিস্ময়ের। একের পর এক মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে, এটা বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনন্য উদাহরণ। এর সাথে আছে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের সুবিধা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। একটা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন এই নতুন ভোটাররা। তারা বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি বলতে ধ্বংসের রাজনীতি দেখেছে।
শিক্ষার্থী সাবিনা বলেন, ‘দেখেন আমার বয়স ২৩। আমি বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এই সরকারকেই দেখছি, বিএনপি জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বাইরে আমি কিছু দেখিনি। ফলে ওরা আমার কাছে কেনো ভাট চাইবে? আমি দিবইবা কেনো? আমিতো জানি না তারা কোন বাড়তি ভালো কিছু দিবে আমাকে। ফলে এই প্রজন্মকে বুঝাতে হলে কাজ দিয়ে বুঝাতে হবে।’
এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথমবার ভোটার হয়েছি। এক ধরনের উচ্ছ্বাস তো কাজ করছেই। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাঁকে ভোট দেব। আমরা চাই গুণগত উন্নয়ন। তবে আমাদের মতো তরুণদের অস্বস্তিটা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ে। বাবা মা যে টাকা পাঠান তা দিয়ে আগে চলতে পারলেও এখন কস্ট হয়। যে বাণিজ্যিক সিন্ডিকেটের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, নতুন সরকার এসে সেদিকে খেয়াল দিবেন এই প্রত্যাশায় ভোট দিতে যাব।’
৫ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামবে ৬৫৩ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট৫ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামবে ৬৫৩ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব বলছে, বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।