চা শিল্পের ১৭০ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড

নিউজ ডেস্ক : আবারও শ্রেষ্ঠত্বের রেকর্ড গড়লো দেশের চা শিল্প। এর ফলে চা উৎপাদন এবং বিপণনের সকল সম্ভাবনায় যুক্ত হবে প্রতিযোগিতামূলক অগ্রযাত্রা।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানায়, সদ্য গত হওয়া ২০২৩ সালের বৎসরিক পর্যালোচনায় এসেছে সর্বকালের সেরা এই ‘প্রথম রেকর্ড’। ১৭০ বছরের চা শিল্পের ইতিহাসে এটাই শ্রেষ্ঠতম অর্জন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি। এটাই সর্বকালের স্বীকৃতি। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি।

২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদিত হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। এর আগে ‘দ্বিতীয় রেকর্ড’ করেছিল ২০২১ সালে। সে বছর ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। আর চা শিল্প চা উৎপাদনের ‘তৃতীয় রেকর্ড’টি করেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি।

সূত্র আরও জানায়, দেশে মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৬৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় ১৭০ বছর ধরে দেশে চা উৎপাদন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে।

বাংলাদেশ চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান সভাপতি এবং সিনিয়র টি-প্লান্টার জি এম শিবলী বলেন, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলেই চা শিল্পে এমন সাফল্য এসেছে। আগে অনেকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে চা বাগান কিনতেন। কিন্তু তারা উৎপাদনে মনোযোগী ছিলেন না। সেদিন আর নেই। বিশেষত বড় করপোরেট হাউসগুলো চা বাগানে বিনিয়োগ করার পর থেকেই উৎপাদন বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশে চায়ের উৎপাদন খরচও অনেকে বেড়েছে। কিন্তু নিলামে অনেক সময় ভালো দাম পাওয়া যায় না। যারা প্যাকেটজাত করেন তারা বাজারে অনেক দামে চা বিক্রি করেন। কিন্তু বাগান মালিকরা তেমন দাম পান না। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই চা শিল্প টিকে থাকার স্বার্থে ভালো চা তৈরি এবং নিলামে ভালো দামের দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি।

প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) পরিচালক ড. রফিকুল হক বলেন, এই রেকর্ডের জন্য চা বাগানগুলোতে নানামুখী কার্যক্রমকে গতিশীল করা হয়েছে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে সমতলে চা চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে চারা ও মেশিনারিজ বিতরণ করা হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চল এবং সমতলেও চা চাষের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া বাগানগুলোর আয়তন আড়াই শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের ইতিবাচক ফল মিলেছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম এনডিসি-পিএসসি বলেন, চা বোর্ড, বাগানমালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি সবার দলগত সাফল্যের ফলেই চায়ের ইতিহাসে উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। চা চাষে প্রণোদনা, সঠিক পরিকল্পনা, বাগানগুলোতে পুরোনো গাছ সরিয়ে নতুন গাছ এবং চারা রোপণ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিদায়ী ২০২৩ বৎসরে চা শিল্পে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশে চায়ের চাহিদা ৯ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ কেজি।

উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন বাড়তি চা রপ্তানিতে নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলবণ চাষীদের মাঝে এসআইবিপিএলসি’র কৃষি বিনিয়োগ বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পে বেশি নজর দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী