ভৈরব প্রতিনিধি : ভৈরব রেলওয়ে জংশন থানাধীন এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে গত একবছরে নারী পুরুষ ও শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৭১ জন। নিহতদের অধিকাংশই অজ্ঞাত। এসব মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় ৭১টি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে থানা পুলিশ।
রেলওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভৈরব-টঙ্গী, ভৈরব-সরারচর রেলপথের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক ঘটনায় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৭১ জন ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী ও ৫ জন শিশু রয়েছে। অসতর্কতার কারণে এসব দুর্ঘটনায় যাত্রী ও পথচারীদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে থানাধীন ভৈরব-টঙ্গী ৭০ কিলোমিটার ও ভৈরব-সরারচর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রেলপথ। ভৈরব রেলওয়ে থানা সীমানায় রয়েছে মোট ১৯টি রেলওয়ে স্টেশন। এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তারা চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা, রেলপথ পারপার, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রী, দুই বগীর সংযোগস্থলে বসে যাতায়াত কিংবা ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলন্ত অবস্থায় যাতায়াতকালে অসাবধানতাবশত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করলেও এসব স্টেশন থেকে বিশেষ করে লোকাল ও মেইল ট্রেনের অসংখ্য যাত্রী ট্রেনের বগীর সীমাবদ্ধতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ করায় এসব দুর্ঘটনা হয়।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউছুফ আলী মোল্লা জানান, ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে অপেক্ষমান যাত্রীদের উদ্দেশ্যে স্টেশনে মাইকিং করে জানানো হয় যাত্রীরা যেন রেলাইন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে ও রেললাইন পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার করে। চলন্ত অবস্থায় ট্রেন থেকে নামতে গিয়েও অনেকে ট্রেনে কাটা পড়েন। এছাড়াও বিরতিহীন ট্রেন থেকে ধীরগতি অবস্থায় যাত্রীদের অনেকেই স্টেশনে ওঠানামা করতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন। চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠানামা মোটেই উচিৎ নয়। রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ সব সময়ই যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সতর্কতামূলক প্রচারণা করে থাকে।
বিজ্ঞাপন
ভৈরব রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্সপেক্টর এসএম তাজবীর বলেন, রেল ভ্রমণে যাত্রীরা যেন ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, কিংবা দুই বগীর সংযোগস্থলে বসে যাতায়াত না করে সেজন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাইরেন বাজিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করে থাকে। অসতর্ক অবস্থায় যাত্রীদের রেললাইন পারাপার কিংবা ট্রেনে ওঠানামা করতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম সিকদার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রেল ভ্রমণের কারণে রেলওয়ে পুলিশ আর্থিক জরিমানা করে আদালতে সোপর্দ করলেও পরবর্তীতে তারা বেরিয়ে এসে পুনরায় ওই পথই বেছে নেয়। এক্ষেত্রে চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা ত্যাগ এবং স্টেশনে স্টপেজ নেই এমন ট্রেনে ভ্রমণ না করাসহ ওভারব্রিজ ব্যবহার করা হলে ওই সকল অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
Jagonews24 Google News Channelজাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল।
তিনি আরও বলেন, ট্রেনের বগির ভেতরে বসে যাতায়াত ব্যতীত ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ অনেকটা রোধ করা গেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর অপমৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। ২০২৩ সালে ৭১টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসকল অপমৃত্যুর ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় ৭১টি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।