নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি জানিয়েছেন, নীতিগতভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন অফিসিয়ালি কাগজ পেলে দ্রুত ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ নিয়ে আসা হবে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার সে বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আনতে পদক্ষেপ নেবো।
এর আগে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণবিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে গত ২৪ জানুয়ারি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু টেলিফোনে আলাপ করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ উঠিয়ে নেয়নি। তবে দেশটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। ওই খবরে আরও বলা হয়, ঠিক কী পরিমাণে পেঁয়াজ ভারত সরকার রপ্তানি করবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কবে থেকে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়েও জানাতে পারেনি ইকোনমিক টাইমস।
ভারতীয় বড় রপ্তানিকারকরা গত রোববার সে দেশের সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক এলাকায় এরই মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ রুপি থেকে ১৩ রুপিতে নেমে এসেছে। রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে দেশটিতে পেঁয়াজের এই অন্যতম উৎপাদনস্থলের কৃষকরা তা প্রত্যাহারের জন্য বিক্ষোভ করে আসছিলেন। নাসিক জেলা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতি বেশ কয়েক দফায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এর আগে গত আগস্টে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
এরপর হুট করেই বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এখন খুচরা পর্যায়ে এক কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে টাক্সফোর্সের সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ১ মার্চ থেকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হবে। নতুন মূল্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমবে। এতে বোতলের এক লিটারের সয়াবিন তেলের দাম হবে সর্বোচ্চ ১৬৩ টাকা। এছাড়া খোলা তেলের সর্বোচ্চ মূল্য থাকবে ১৪৯ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে।
টিটু বলেন, মিয়ানমার সবসময় নিউজ হয় আমাদের বর্ডার এবং রোহিঙ্গা নিয়ে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন বর্ডার থেকে নদীপথে আনতে পারি সে ধরনের একটি এমওইউ ড্রাফট আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসেছে।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি উনি ব্যাপারটিকে পজিটিভলি নিয়েছেন। আমাদের যিনি নৌপরিবহন মন্ত্রী রয়েছেন ওনাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক নৌপরিবহন চুক্তি আছে তার মাধ্যমে আমরা যেন মিয়ানমার থেকে সহজে পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি।
তিনি আরও বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুবার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মতো এটিতেও আমাদের আমদানিনির্ভর হতে হবে না।