নিউজ ডেস্ক : মার্চের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। নতুন মন্ত্রিসভায় ৮ থেকে ১০ জন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এ মন্ত্রিসভার আকারে অনেক ছোট। তাই অল্পদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভার আকার বাড়বে এটি অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে।
এরই মধ্যে সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তাদের শপথ হবে। তাই মার্চের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিসভায় নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিয়োগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। ১০ থেকে ১২টি গাড়ি প্রস্তুত রাখার জন্য সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরকে (পরিবহন পুল) চাহিদাও দিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। সর্বশেষ তিনি বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয়ের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে তিন বছরের চুক্তিতে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু দুই বছর থাকতেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি আহমদ কায়কাউসের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন কায়কাউস।
গুঞ্জন রয়েছে, তিনি মূলত আরও বড় দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। সেজন্যই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতিতে এ পথ ছাড়ার আবেদন করেছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভায় তার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।
আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আখন্দের নামও আলোচনায় এসেছে। সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার মামলারও তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেলেও তিনি হেরেছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমেরও নতুন মুখ হিসেবে স্থান হতে পারে মন্ত্রিসভায়। তিনি এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মন্ত্রিসভার আকার বাড়ার বিষয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, কিছু জায়গায় যেমন শ্রম মন্ত্রণালয় ও সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয় (যেখানে এখনো মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি) এগুলোতে কোনো না কোনো সময় মন্ত্রী আসবে।
তিনি বলেন, এটা আমার মনে হয় সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলো আসার পরে, মন্ত্রী আসতে পারে। সেই হিসেবে এর পরে চিন্তা-ভাবনা। প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে তিনি এটা করবেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির আসন ১১টি। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। এর বাইরে সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন।
পরে ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন।
গত ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। কোন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও আগের মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কোন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ দুই মন্ত্রণালয় নতুন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী পাচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া অর্থ; স্বরাষ্ট্র; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি; স্বাস্থ্যসহ নিয়োগ না পাওয়া বড় বড় মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ পেতে পারেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী নিজের কাছে রেখেছেন।
যদিও ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভা ছিল ৪৭ সদস্যের। ওই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন।