ফাইন্যান্স কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে নতুন নীতিমালা

নিউজ ডেস্ক : ফাইন্যান্স কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও সম্মানির নীতিমালা সংক্রান্ত নতুন সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইন্যান্স কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যরত সব ফাইন্যান্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং তাদের দায়-দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারণে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র পরিচালকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৪ এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘স্বতন্ত্র পরিচালক’ বলতে ‘এইরূপ ব্যক্তিকে বোঝাবে, যিনি ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক হইতে স্বাধীন এবং যিনি কেবল ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বার্থে নিজের মতামত দেবেন। ফাইন্যান্স কোম্পানির সহিত কিংবা ফাইন্যান্স কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সহিত যাহার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত কোনো স্বার্থের বিষয় জড়িত নেই।’

ফাইন্যান্স কোম্পানিতে কমপক্ষে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন পরিচালক থাকবে। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং ন্যূনতম বয়স ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স হবে ৭৫ বছর। তাকে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে।

যারা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে অগ্রাধিকার পাবেন:
সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, আইন ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক; আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, হিসাব পেশায় নিয়োজিত হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী ব্যক্তি, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যাবে।

যারা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবে না:
কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বার্থের বিষয়ে জড়িত কোনো ব্যক্তি, অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি, ব্যাংক-কোম্পানি, বীমা কোম্পানি বা এরূপ কোম্পানিগুলোতে ও কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পক্ষে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না। তাছাড়াও মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক এরূপ কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা উক্ত ফাইন্যান্স কোম্পানি, ব্যাংক-কোম্পানি বা বীমা কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ, যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে এরূপ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

ফৌজদারি কোনো অপরাধে দণ্ডিত, জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, ঋণ খেলাপি, দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে দাণ্ডিত ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবে না। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ৫ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি কোম্পানির নিজস্ব সক্ষমতা বিবেচনায় প্রতি মাসে স্থায়ী সম্মানি বাবদ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পাবেন। কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানি হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা (প্রযোজ্য কর কর্তন সাপেক্ষে) পাবেন। প্রতি মাসে পর্ষদের দুটি সভা, নির্বাহী কমিটির দুটি সভা, অডিট কমিটির একটি সভা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় উপস্থিতির জন্য সভাপ্রতি নির্ধারিত সম্মানি পাবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক পদের মেয়াদ ও অপসারণ:
সাধারণভাবে স্বতন্ত্র পরিচালকরা ৩ বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ করা হবে এবং মেয়াদ শেষে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ১৫ ও ১৬ ধারার বিধান সাপেক্ষে পরবর্তী মেয়াদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে পরিচালনা পর্ষদ সংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্র পরিচালককে অপসারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করতে পারবে। এছাড়া, স্বতন্ত্র পরিচালক নিজে ৭ দিনের নোটিসে পদত্যাগ করতে পারবেন।

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ১৪, ১৫ ও ৪১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নিদের্শনা জারি করা হলো। ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালকদের অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে আগামী দুই মাসের মধ্যে এ সার্কুলারে বর্ণিত বিষয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কার্যপত্র পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইএলও গভর্নিং বডির অধিবেশনে ফিলিস্তিনে গণহত্যার নিন্দা বাংলাদেশের
পরবর্তী নিবন্ধএনসিসি ব্যাংক-বাংলাদেশ ব্যাংক চুক্তি