নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের রেড সিগন্যাল দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে প্রমাণিত হলে বিদেশ ভ্রমণ, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন। পাশাপাশি তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননার জন্য যোগ্য হবেন না।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়, কোনো ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির অনুকূলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ, আরোপিত সুদ তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ না করলে তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। আবার জালিয়াতি করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে সে উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করলে অথবা অন্য কোন ব্যাংকের জামানত করা সম্পদ অনুমতি ছাড়া নতুন ঋণে জামানত হিসেবে দেখালে তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন।
নির্দেশনা বলা হয়, এসব ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরকেএসসি) নিকট কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিকট তালিকা পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা, গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব সংস্থা তাদের আইনানুযায়ী ইচ্ছাকৃত খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি কোন ইচ্ছাকৃত খেলাপি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ারও যোগ্য হবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকায় কারও নাম এলে ঋণ পরিশোধ করে তালিকা থেকে অব্যাহতির ৫ বছরের মধ্যে কোন ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। যদি কোন পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে পড়েন তবে তার পরিচালক পদ বাতিল হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার পর তালিকার বিরুদ্ধে আপিল না করলে বা আপিল করার পর না মঞ্জুর হলে তাকে ২ মাসের মধ্যে অর্থ পরিশোধে নোটিশ দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন-ক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে ব্যাংক। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঋণ, অগ্রিম আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।
নির্দেশনা মতে, ইচ্ছাকৃত খেলাপির ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপিত বা অনারোপিত কোনো সুদ মওকুফ করা যাবে না। একই ঋণ পুনঃতফসিলও করা যাবে না। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত খেলাপির ঋণ হিসাবটি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক টেকওভার করা যাবে না। সম্পূর্ণ আদায় বা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবেই তিনি বিবেচিত হবেন।
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকের এমডি ও সিইওর দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তার অধীনে প্রধান কার্যালয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট করতে হবে। অবশ্যই আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে এ ইউনিটটি গঠন করতে হবে। কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তা শনাক্ত করবেন। শনাক্ত হওয়ার পর শনাক্তকরণের কারণ উল্লেখ ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে তার বক্তব্য প্রদানের জন্য ১৪ কর্মদিবস সময় দেবে। ওই সময়ের মধ্যে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে অথবা তার বক্তব্য যথাযথ বিবেচিত না হলে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ কর্তৃক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ব্যাংকের এমডির অনুমোদন নিতে হবে।
তবে ‘বৃহৎ শিল্প’ খাতের ৭৫ কোটি ও তদূর্ধ্ব, ‘মাঝারি শিল্প’ খাতের ৩০ কোটি ও তদূর্ধ্ব এবং অন্যান্য খাতের ১০ কোটি ও তদূর্ধ্ব স্থিতিসম্পন্ন ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির বা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়া আবশ্যক হবে। কোনো ব্যাংক নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট বিবেচিত হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সালের ক্ষমতাবলে ওই লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। ওই লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে লঙ্ঘনের প্রথমদিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব লাখ টাকা জরিমানা আরোপিত হবে।