নিউজ ডেস্ক : আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এফবিসিসিআই) সঙ্গে বৈঠকে করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৪.৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেবে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
এছাড়া দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান থাকায় সংস্থাটি নারী ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাবও দিতে পারে।
এনবিআরের সাথে পরামর্শক কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য সংস্থাটি। সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এফবিসিসিআইয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে করদাতারা মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছেন, সে কারণে আমরা [এফবিসিসিআই] করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করব।’
গত ১৪ মার্চ এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দলও করমুক্ত আয়ের সীমা ১.৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছে। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ব্যক্তি খাতের করদাতাদের দেওয়া করছাড়ের সুবিধাগুলো কমিয়ে করের হার পুনর্গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে।
বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩.৫ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়েছে।
আয়করের হার বর্তমানে পরবর্তী ১ লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং এরচেয়ে বেশি আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছিল—সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন করদাতাদের করহার হ্রাস।
বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটির ওপরে। তাদের মধ্যে গত বছরে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৩৭ লাখ।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত। ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সমন্বয় করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এজন্য করমুক্ত আয়সীমা কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা করা উচিত।’
এছাড়া বেশি আয়ের করদাতাদের বেশি হারে কর দেওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে সর্বোচ্চ স্ল্যাব ছিল ৩০ শতাংশ। কিন্তু কোভিডের বছর তা ২৫ শতাংশ করা হয়। এটা করা উচিত হয়নি। এটি আগের জায়গায় নেওয়া উচিত।’
এফবিসিসিআইয়ের লিখিত প্রস্তাবের একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে এসেছে। তাতে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে বিদ্যমান উৎসে কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনি, সব ধরনের ফল সরবরাহে ২ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে ৪৩টি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারীরা করদাতার প্রুফ অভ সাবমিশন অভ রিটার্ন (পিএসআর) নেয় বাধ্যতামূলকভাবে। এই কঠিন শর্ত আরও সহজ করার প্রস্তাব আসতে পারে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে।
এছাড়া রপ্তানির উৎসে কর অর্ধেক কমানোর প্রস্তাবও দেওয়া হতে পারে।