নিউজ ডেস্ক : পুঁজিবাজারে শেয়ার ও ইউনিটের ধারাবাহিক দরপতন ঠেকাতে নতুন নিয়ম চালু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে এখন থেকে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দামভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সই করা এক আদেশ জারি করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ জুন শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয় তা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে দাম কমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হবে ৩ শতাংশ। ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজ বাদে সব সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে। দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্য স্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নামার সুযোগ ছিল না। ফ্লোর প্রাইস আরোপের ফলে বাজারে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। বেশিরভাগ শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দাবি করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পরে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
পতন ঠেকাতে নতুন নিয়ম বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারের উপকার হবে না। বরং বাজারে স্বাভাবিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটবে।
তারা বলছেন, এর আগে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দীর্ঘদিন বাজার আটকে রাখা হয়। বহু সমালোচনার পর বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। এখন আবার সেই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এতে বাজারের কোনো উপকার হবে না।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৫৫ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্টের নিচে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক এর অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালে ৪ মে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
বাজারের এই পতন ঠেকাতে তাই শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কোনো শেয়ারের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৪টি বা ৭০ শতাংশেরই দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ৭৯টি বা ২০ শতাংশ শেয়ারের। আর দাম অপরিবর্তিত ছিল ৪১টির বা ১০ শতাংশের।
সূচক ও লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও মোট লেনদেনে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। এ দিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬০৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫ কোটি টাকা বেশি।