নিউজ ডেস্ক : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন সহজে ব্যবসা করতে পারে, সেই প্রক্রিয়া সহজীকরণে কাজ করছে সরকার। যে কোনও ব্যবসা উদ্যোগকে সফল ও প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের দায়িত্ব। ব্যবসায়ীদের মার্কেট এক্সেসের সুযোগ তৈরিতেও সরকার কাজ করছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিজনেস রিলেটেড ব্যারিয়ার্স অ্যান্ড পসিবল ওয়ে-আউট’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বড় শিল্পের পাশাপাশি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বাধাহীনভাবে ও সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। এ জন্য এফবিসিসিআইসহ বেসরকারি খাতের সব অংশীজন, গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা এবং অ্যাকাডেমিশিয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি, শিল্পের উন্নয়নে খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, দক্ষিণ এশিয়া এবং আসিয়ান দেশ-সমূহের বিজনেস হাব হিসেবে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন ১৭০ মিলিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে এ দেশকে বিশ্বের নবম বৃহৎ ভোক্তা বাজার হিসেবে পরিণত করবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বহুবিধ শুল্ক ও অশুল্ক বাধার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা স্থাপনে ও সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে বিদ্যমান রেগুলেটরি বিষয়সমূহ, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, সনদ প্রাপ্তি ও নবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, শুল্কায়ন জটিলতা, সর্বোপরি অস্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বৈশ্বিক নেতিবাচক পরিস্থিতির ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
এমন পরিস্থিতিতে বিষয়গুলো নিয়ে সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা, ও অ্যাকাডেমিয়াসহ সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে একই প্ল্যাটফর্মে আলোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুল আলম।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া জানান, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিডা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৮টি এজেন্সির ১৫০ বেশি সেবা এক ছাতার নিচে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জ্যানওসকি। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে এখানে জার্মান থেকে বিনিয়োগ আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তার প্রবন্ধে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সনদ প্রাপ্তি এবং নবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা দ্রুত হ্রাসের পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর সনদ নবায়নের জটিলতা দূর করতে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে সনদ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমনি। উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমাতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা ব্যবসায় রেগুলেটরি বাধা, ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি), এমপ্লয়ি রিটেনশন ক্রেডিট (ইআরসি) ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলো চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সেগুলো সমাধানের আহ্বান জানান।
এর আগে, জিআইজেড বাংলাদেশের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর ওয়ের্নার ল্যাঞ্জ বলেন, বাংলাদেশের শিল্প কারখানার যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের শিল্প কারখানা আরও বিকশিত হবে।
সেমিনারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় এফবিসিসিআই, সিপিডি এবং জিআইজেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মো. মুনির হোসেন, পরিচালক, ব্যবসায়ী নেতাসহ অন্যান্যরা।