নিউজ ডেস্ক : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার)কে তিনবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি কলকাতায় গত জানুয়ারি মাসেও একবার হত্যার পরিকল্পনা সাজায় শাহীন ও আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল। কিন্তু সেবার তাদের পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ায় বেঁচে যান সংসদ সদস্য আনার।
এছাড়া গত ১৩ তারিখ শহীনের ফাঁদে পা দেওয়ার পরে আনারকে জিম্মি করে আপত্তিকর ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও কলকাতার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার ওপর অতিরিক্ত চেতনা নাশক প্রয়োগ করার কারণে জ্ঞান না ফেরায় হত্যা করা হয়।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হারুন বলেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল ঢাকায় কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের হাতে গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দুটি বিষয় পেয়েছি। দুটি গ্রুপ এখানে কাজ করেছে। একটি গ্রুপ মদদ দিয়েছে আরেকটি গ্রুপ বাস্তবায়নে কাজ করেছে। এই ঘটনার মদদদাতা আক্তারুজ্জামান শাহীন ৩০ এপ্রিল কলকাতায় তিন সদস্যকে নিয়ে যান। সেই দলে একজন মেয়ে বাস্তবায়নের মূল নেতা ছিলেন। শাহীন ১০ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের মূলনেতা পূর্ব বাংলা কমিউনিস্টের নেতা। যিনি ভুয়া নাম ব্যবহার করে ভারতে গিয়েছেন। সেই আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে দেশে চলে আসেন। তাদের কাছ থেকে আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। যেহেতু ভারতীয় পুলিশ আমাদের এখানে কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হলে আমরাও কলকাতায় চলে যাবো।
কি কারণে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এই হত্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এই হত্যা বাস্তবায়নে সবাই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে অন্তত ৫ থেকে ৬টি গলাকাটার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। কি কারণে হত্যা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি। কি কারণে এই হত্যা সেটি আরও তদন্ত শেষে বলা যাবে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আগেও সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগেও তারা হত্যার চেষ্টা করেছে। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়বার জানুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ১৮ সময়েও সংসদ সদস্য আনোয়ারুল কলাকাতায় যান। সেই সময়ে হত্যাকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কলকাতায় যায়। কিন্তু হোটেলে থাকার কারণে সেইবার তারা ব্যর্থ হয়। তৃতীয় ধাপে তারা এসে সফল হয়েছে। তবে হত্যার আগে তাদের পরিকল্পনা ছিলো সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে জিম্মি করা। এরপর তার আপত্তিকর ছবি তুলে দুই দিন ব্লাকমেইল করে হুন্ডির মাধ্যমে এবং কলকাতায় থাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করার। কিন্তু আনার ওই বাসায় যাওয়ার পরে তার মুখে চেতনা নাশক স্প্রে করায় জ্ঞান হারান। অজ্ঞান অবস্থায় আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। কিন্তু তাদের মূল টার্গেট ছিলো হত্যা করা। আদায় করার টাকা হত্যকারীদের ভাগ করে দেওয়ার কথা ছিলো। তবে স্প্রে করায় জ্ঞান না ফেরায় ব্ল্যাকমেইলের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে লাশ গুমের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এরপর তারা মোবাইলগুলো বিভিন্নস্থানে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি হত্যাকারীদের একজন আনারের চারটি মোবাইল বেনাপোল এলাকায় নিয়ে আসে। এখানে এসে আনারের প্রতিপক্ষকে চারটি মোবাইল থেকে ফোন করা হয়। ফোন করে বলা হয় ‘শেষ’। এর টার্গেট ছিলো এই ফোনের সূত্র ধরে যেন পুলিশ প্রতিপক্ষকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। হত্যাকারীদের যেন না পায়।
স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে অনেকগুলো বিষয় আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা আপনাদের জানাতে পারবো।
হত্যার ঘটনায় কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কিসের ভিত্তিতে হত্যার কথা বলা হচ্ছে জানতে চাইলে হারুন বলেন, আমরা অনেক তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখন প্রকাশ করছি না। প্রমাণ পেয়েছে বলেই কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের দেশে একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। কলকাতায় মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। নিশ্চই তারা আলামত পেয়েছে। কলকাতায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে আমারও যাবো।