স্পোর্টস ডেস্ক : বোলাররা অর্ধেক কাজ সেরে দিয়েছিলেন। জিম্বাবুয়েকে তারা আটকে দেন ১২৪ রানেই। কিন্তু বাংলাদেশ ইনিংসে দুইবার বৃষ্টি হানা দেয়ায় রান তাড়ায় চাপে পড়ে গিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
সেই চাপ উড়িয়েছেন অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম আর তাওহিদ হৃদয়। ঝোড়ো জুটিতে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৮ উইকেট আর ২৮ বল হাতে রেখে জয় এনে দিয়েছেন তারা। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ ইনিংসে বারবার হানা দিয়েছে বৃষ্টি। প্রথম দফায় ৩ ওভারে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ১০ রান তোলার পর নামে বৃষ্টি। দ্বিতীয় দফায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশ ৭.২ ওভারে ১ উইকেটে তোলে ৪৪ রান।
বৃষ্টি আবার বন্ধ হলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পঞ্চাশ পার করেন তানজিদ হাসান তামিম আর নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে জুটিতে পঞ্চাশ পেরোনোর পর উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২৪ বলে ২১ রানের ইনিংসে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
সঙ্গী হারিয়েও থামেননি অভিষিক্ত তানজিদ তামিম। ৩৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। তৃতীয় উইকেটে তাওহিদ হৃদয় আর তামিমের জুটিতে আসে ৩৬ বলে ৬৯ রান।
তামিম ৪৭ বলে ৮ চার আর ২ ছক্কায় ৬৭ আর হৃদয় ১৮ বলেই ৫ চার আর ১ ছক্কায় খেলেন ৩৩ রানের হার না মানা ইনিংস।
বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, ১২৫ রানের। কিন্তু লিটন দাস ওপেনিংয়ে নেমে ফের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। টানা অফফর্মের কারণে ওয়ানডে দলে জায়গা হারিয়েছেন। মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় দলে ফিরে সেই আগের চেহারায় লিটন।
জিম্বাবুয়ের মতো প্রতিপক্ষ পেয়েও রানে ফিরতে পারলেন না। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। ৩ বলে ১ রান করে জিম্বাবুয়ে পেসার মুজারবানির বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন লিটন দাস।
এর আগে ৪১ রানে জিম্বাবুয়ের ছিল না ৭ উইকেট। মনে হচ্ছিল, টাইগার বোলারদের তোপে অল্পতেই গুটিয়ে যাবে তাদের ইনিংস। কিন্তু অষ্টম উইকেট জুটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। বিপর্যয় কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২৪ রান তুলে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি হজম করেন শরিফুল ইসলাম।
দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণে নিয়ে আসেন শান্ত। শেখ মেহেদী অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে দেরি করেননি। নিজের দ্বিতীয় বলে দুর্দান্ত এক টার্নিং ডেলিভারিতে অভিজ্ঞ ক্রেইগ আরভিনকে (০) বোল্ড করেন এই অফস্পিনার। আরভিন ডিফেন্ড করেও উইকেট বাঁচাতে পারেননি।
পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৯ মাস পর দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান। লেগসাইডের বল ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে তাসকিন আহমেদের ক্যাচ হন অভিষিক্ত জয়লর্ড গাম্বি (১৪ বলে ১৭)।
শেখ মেহেদীর করা পরের ওভারে জোড়া উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম বলে রানআউট হন ব্রায়ান বেনেট (১৫ বলে ১৬)। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে মাহমুদউল্লাহর থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক জাকের আলি।
পরের বলে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা (০) প্যাডেল সুইপ খেলতে গিয়ে হন টার্নে পরাস্ত। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে লিটন দাসের হাতে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৮ রান তুলে জিম্বাবুয়ে।
সপ্তম ওভারে এসে আবার তাসকিন টানা দুই বলে করেন দুই শিকার। ব্যাটে লেগে ইনসাইডেজে বোল্ড হন শন উইলিয়ামস (০)। পরের বলে রায়ান বার্ল (০) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রিশাদকে ক্যাচ দেন। লুক জঙউইকে (২) তুলে নেন সাইফউদ্দিন।
৪১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন উইকেটরক্ষক ক্লিভ মাদান্দে আর ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। অষ্টম উইকেটে ৬৫ বলে ৭৫ রান যোগ করে জিম্বাবুয়েকে সম্মানজক পুঁজি এনে দিয়েছেন এই যুগল।
শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৯ বল বাকি থাকতে মাদান্দেকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক ব্যাটার করেন ৩৯ বলে লড়াকু ৪৩। শেষ বলে রানআউট হওয়া মাসাকাদজা ৩৮ বলে করেন ৩৪।
সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ১৫ আর তাসকিন সমান ওভারে ১৪ রান দিয়ে নেন ৩টি করে উইকেট। ১৬ রানে ২ উইকেট শিকার করেন শেখ মেহেদী। ভালো করতে পারেননি শরিফুল ইসলাম আর রিশাদ হোসেন। দুজনই ৪ ওভারে ৩৭ করে রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।