নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমছে। রপ্তানিসহ অন্যান্য বৈদেশিক আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় ও বিদেশি ঋণ পরিশোধে বেশি ডলার খরচের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। এ কারণে রিজার্ভ কমেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮ মে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৭ কোটি মার্কিন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৯৮২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন)। গত মাসের একই সময়ে অর্থাৎ গত ৮ এপ্রিল বিপিএম–৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। ওই দিন মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যেসব ডলার পাওয়া যায়, তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায়, সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। এছাড়া, করোনা মহামারির পর বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে; যা এখনো অব্যাহত আছে। এ সঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে, ধারাবাহিকভাবে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এর পর তা বেড়ে করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে। ওই দিন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০৪ কোটি ডলার। এর পর ডলার সঙ্কটে পড়ে দেশ। একই সঙ্গে গত বছর থেকে রিজার্ভ কমতে থাকে।