বরগুনা প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হবে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে উপকূলের মৎস্য মোকামগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মে-জুন মাস হচ্ছে সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন নিরাপদ ও প্রজননের পর রেণু মাছের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৬৫ দিন গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৃষ্টি না হওয়া, তাপমাত্রার কারণে সাগর নদীর পানি গরম থাকায় ইলিশ তো দূরের কথা গত দুই মাস ধরে জালে মাছ ধরা পড়ছে না। জেলেদের এমন দুঃসময়ের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে সংসারের খরচ, দাদন ও ঋণের টাকার জোগান হবে কোথা থেকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা।
এছাড়া বরাবরের মতো এবারও জেলেদের অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে। যেদিন ভারতে শেষ, সেদিন বাংলাদেশে শুরু; প্রতি বছরই ভারতের জেলেরা বাংলাদেশি জলসীমায় নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা এক সময় দেওয়াসহ আন্তঃদেশীয় একটি ব্যবস্থাপনা দরকার বলে দাবি করছেন জেলেরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে জেলেদের তেমন তৎপরতা নেই। শেষ মুহূর্তে এসেও জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। তবুও বলেশ্বর বিষখালী নদীর তীরে জাল সেলাই করছেন একদল জেলে। সাগরে মাছ ধরতে না গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জাল মেরামত করছেন তারা। এমন অবস্থায় জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
এদিকে মৎস্যজীবীরা জানান, ২০১৯ সাল থেকে এ আইন পাথরঘাটার তীরবর্তী বঙ্গোপসার কেন্দ্রিক উপকূলে কার্যকর শুরু হয়েছে। এর আগে কখনই এ আইন বাস্তবায়ন হয়নি। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলিং জাহাজ মালিকদের চাপের কারণে এ আইনের আওতায় উপকূলের ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারগুলোকেও আনা হয়েছে। ২০১৫ সালে এসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সমুদ্রগামী ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারের জেলেরা সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ইঞ্চি ফাঁসের বৈধ জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করেন। আর ট্রলিং জাহাজ সম্পূর্ণ অবৈধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করছে এবং ওই ট্রলিং জাহাজের ৪০ মিটার পানি গভীরতায় মাছ ধরার কথা থাকলেও উপকূলের মাত্র ৪ থেকে ৫ মিটার গভীরতায় এসে মাছ শিকার করে। অথচ যে জাল দিয়ে ছোট পোনা মাছ ধ্বংস হয় না এ আইনে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যা যুক্তিসংগত নয়। এ আইন আমাদের জেলেদের ওপর অমানবিক এবং অন্যায়।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপকূলীয় এলাকায় সব জেলে, ফিশিং বোট ও নৌকার মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পোস্টার, লিফলেটসহ মাইকিং করেও জেলেদের সচেতন ও সতর্ক করা হয়েছে।