নিউজ ডেস্ক : বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দেখা করে আদানি গ্রুপের পরিচালক প্রণব বিনোদ আদানি এই তাগিদ দেন।
আদানি গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও প্রণব বিনোদ আদানি একাধারে আদানি অ্যাগ্রো, ওয়েল ও গ্যাস কোম্পানির এমডি হিসেবেও দয়িত্ব পালন করছেন।
বুধবার (২৯ মে) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার নিজ দপ্তরে দেখা করেন আদানি গ্রুপের পরিচালক। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আদানির প্রতিনিধি অনিল সারদানা, এস বি খিলিয়া, বিপুল যাদব ও অভিষেক তিয়াগি।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানি গ্রুপের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে এটিও পুরো বকেয়া নয়, কোম্পানিটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আরও বেশি পরিমাণ অর্থ পাবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদানি পাওয়ারের সেপ্টেম্বরের আংশিক ও অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ মাসের পুরো বিল বকেয়া রয়েছে। এ সময়ে কোম্পানির মোট বকেয়ার পরিমাণ ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে মার্চ এপ্রিল ও মে মাসের হিসাব যোগ করা হলে বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়বে।
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।
নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিংক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। অনেকে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে অনুকূলে নয় বলে মন্তব্য করেছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থছাড়ের জন্য গত এপ্রিলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়।
বিপিডিবির ওই চিঠিতে চার (মার্চ-জুন ২০২৪) মাসের ভর্তুকির অর্থ বাবদ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে বৈদেশিক বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ১০৩ কোটি ডলার ও অভ্যন্তরীণ বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।
চাহিদার ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকার মধ্যে মার্চের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা, এপ্রিলের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, মে মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও জুনের জন্য ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকার প্রয়োজন। নগদ অর্থের সঙ্কটের কারণে বিদ্যুতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধে এরই মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রণব বিনোদ আদানি বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করার বিষয়ে আমরা কী ভূমিকা পালন করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আর অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা এরই মধ্যে অনেক বিনিয়োগ করেছে, আরও করতে চায়। আদানি গ্রুপের পাওনা অর্থ পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাওনা থাকলে দিতে হবে না?