নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া খেলাপি ঋণের তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, তথ্য গোপন করার কৌশল সুশাসনের অন্তরায়।
শনিবার (৮ জুন) এফডিসিতে প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে কমানোর অঙ্গীকার থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এই লক্ষ্য অর্জনে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশেষ উদ্যোগ না থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে।
তিনি বলেন, কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আহরণ করতে পারছে না। দেশে যে পরিমাণ টিআইএন ধারী আছে তাদের অর্ধেকও আয়কর রিটার্ন দাখিল করে না। রাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ রয়েছে তা পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বাজেট অর্থায়নে দেশিয় ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় ঋণ নির্ভর হলে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে।
বর্তমানে রিজার্ভের যে পরিস্থিতি তা নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, তবে শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। দারিদ্র বিমোচনে আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্ত কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্বের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এ কর্মসূচির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, রিজার্ভের ঘাটতি, ডলারের উচ্চমূল্য, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, অর্থপাচার, লাগামহীন দুর্নীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন একটা বৈরী সময়ে উপস্থাপিত হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে নানা সংকটের কথা বলা হলেও এর উত্তরণের কৌশলগত কোন স্পষ্টতা নেই। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেই কোন পদক্ষেপ। অর্থপাচার রোধ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেই কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা। যারা কর ফাঁকি দেন তাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে যারা নিয়মিত কর দেন তাদের ওপর বাড়তি কর আদায়ের ছক দেখা গেছে ঘোষিত বাজেটে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, পুঁজি পাচার, হুন্ডি বন্ধসহ ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেট কোন উদ্যোগের কথা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘাটতি বাজেট পূরণে রয়েছে ব্যাপক ব্যাংক নির্ভরতা। ঘোষিত বাজেটে দেশি বিদেশি উৎস থেকে যে পরিমাণে ঋণ নেবার কথা ভাবা হচ্ছে তার সুদ দাঁড়াবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ বা মোট বাজেটের ৭ ভাগের ১ ভাগ। ফলে মূল ঋণ ছাড়াও বাড়বে ঋণ পরিশোধের চাপ।