লালমনিরহাট প্রতিনিধি :
লালমনিরহাটে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর পানি বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এতে জেলার ৫ উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় রান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছে পরিবারগুলো।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
এর আগে সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, ফকিরপাড়া, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে ফসলি জমির ধানের বীজতলা, বাদাম ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে পচন ধরেছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পাশাপাশি তিস্তা ও সানিয়াজান অববাহিকার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন।
ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে গিয়ে অত্র এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে দুইদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে পরিবারগুলো। এখনো সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা করা হয়নি পরিবারগুলোকে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চরসিন্দুর্না এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১নং ওয়ার্ডের ৫টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো দুইদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, অত্র ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনটি ওয়ার্ডের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি। পানিবন্দি ও নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া কয়েকটি পরিবারের তথ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে।