নিউজ ডেস্ক :
ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং ১৮৪০ জন আহত হয়েছেন। এসময়ে রেলপথে ২২টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, ৪ জন আহত, নৌপথে ৬টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ৬ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বুধবার (২৬ জুন) রাজধানীর বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এমন দাবি করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল আজহায় ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছিল। তার সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১১.৫৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৫৩.১৭ শতাংশ, আহত ২৩৮.২৩ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮৮ জন নিহত ও ১৮৫০ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘ এক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভাল ছিল। ঈদের আগে ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকায় যাত্রী চাপ কিছুটা ভাগ হয়েছে। দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৭ থেকে ৯ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়।
তবুও ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ব্যাপকহারে বাড়ার কারণে কোন কোন সড়কে এসব যানবাহন হঠাৎ করে জাতীয় মহাসড়কে উঠে আসার কারণে, কোন কোন জাতীয় মহাসড়কে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এছাড়াও সড়কে চাঁদাবাজি, ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহনসহ নানা কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। একই সাথে সড়কে ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন ফিটনেস বিহীন যানবাহন ও খোলা ট্রাকে যাতায়াতে বাধ্য হয়েছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১০ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত, ৭৬২ জন আহত হয়েছে। অপর দিকে, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ঈদের আগে পরে ১৪ দিনে ১০৭৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত বা পা ভেঙে ভর্তি রোগী ৪৭৮ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৩২টি মোটরসাইকেল দুঘটনায় ১৩০ জন নিহত, আহত হয়েছে ৫৯৯ জন। যা মোট দুর্ঘটনার ৪২.৭১ শতাংশ, মোট নিহতের ২৮.৩৮ শতাংশ, মোট আহতের ৩২.৫৫ শতাংশ। এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন চালক, ১১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৮ জন পথচারী, ৬১ জন নারী, ২৪ জন শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, ১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য (১ সেনাবাহিনী), ৩ জন শিক্ষক, ২ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হয়েছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৫.২৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫১.১৩ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.০৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, দশমিক ৩২ শতাংশ ট্রেনের সাথে যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনা, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ১.৬১ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। দুর্ঘটনার ধরন মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪০.১২ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২২.৯৭ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.৩৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। ০.৩২ শতাংশ রেলক্রসিং, এছাড়াও সারাদেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৮৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে ও দশমিক ৩২ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, সরকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদাসীন, তাই ছোট যানবাহন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গনমাধ্যমে এখন সংঘটিত দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র আসে না। এবারের ঈদে আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত রির্পোট থেকে সারাদেশের হতাহতের সংখ্যা পেয়েছি মাত্র ১০৯৮ জন। অথচ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ১৪ দিনে ভর্তি হয়েছে ১০৭৮ জন। সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ৯ হাজার হাসপাতালে চিত্র অনেক ভয়াবহ। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হলেও কেন সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। সরকারিভাবে তার অডিট হওয়া দরকার।