নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ‘ইকেবানা’ উপহার পাঠিয়েছেন হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাপানি নাগরিক হিরোশি তানাকার মেয়ে আতসুকো তানাকা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে উপহার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এই উপহার এবং আতসুকো তানাকার একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেন।
‘ইকেবানা’ হলো ফুল, পাতা, শাখা-প্রশাখার নান্দনিক ও শৈল্পিক উপস্থাপন। সৌন্দর্যের পাশাপাশি জাপানিজ এ শিল্পকলার পেছনে লুকিয়ে থাকে দার্শনিক ভাবধারা।
গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা চিঠিতে আতসুকো তানাকা জানিয়েছেন, এই উপহারটি (ইকেবানা) তার মা নিজের হাতে তৈরি করেছেন। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রতীক। উপহারের ফুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের, ১ জন ভারতের এবং ৩ জন বাংলাদেশের। তিন বাংলাদেশির মধ্যে একজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। জঙ্গিদের গুলিতে সেদিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হয়েছিলেন। পরে হোলি আর্টিজানে জিম্মিদের উদ্ধারে পরিচালিত কমান্ডো অভিযানে ৫ জঙ্গি নিহত হয়।
নিহত জাপানিদের মধ্যে ছয়জনই ছিলেন ঢাকার মেট্রো রেল প্রকল্পের পরামর্শক। আতসুকো তানাকার বাবা হিরোশি তানাকা তাদেরই একজন।
আতসুকো তানাকা তার চিঠির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং চলতি বছরের শুরুতে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
গত নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় প্রসঙ্গে আতসুকো বলেন, আপনার এই অর্জন আপনার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার ‘ভিশনের’ ওপর বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রমাণ।
গত ৩ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড আয়োজিত (ডিএমটিসিএল) স্মরণসভায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন উল্লেখ করেন আতসুকো তানাকা। তিনি ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাকে পাঠানো শেখ হাসিনার চিঠির কথাও স্মরণ করেন।
আতসুকো বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সে চিঠি আমার হৃদয়ের ক্ষত নিবারণের অনেক বড় উৎস।
বাংলাদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কামনা করেছেন আতসুকো তানাকা। বাংলাদেশে ‘শান্তির শিক্ষা’ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, জাইকা’র বাংলাদেশ অফিসে এক সভায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কীভাবে পাঠ্য কারিকুলামে ‘শান্তি শিক্ষা’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এই শান্তি শিক্ষাকে সক্রিয়ভাবে প্রসারে মি. ইচিগুচি একটি শান্তি রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার পরামর্শ দেন বলে জানান আতসুকো তানাকা।
আতসুকো তানাকা বলেন, পুরস্কার বিজয়ী প্রবন্ধ ঢাকা মেট্রোতে প্রদর্শন করা হবে। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শান্তির বিষয়ে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সমাজসেবাতেও উৎসাহিত করবে।
আতসুকো তানাকা আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোতে প্রদর্শিত এই প্রবন্ধ তার বাবার মতো হোলি আর্টিজানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মাকে প্রশান্তি দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল প্রচেষ্টায় সফলতা কামনা করে চিঠি শেষ করেন আতসুকো তানাকা।