ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীর মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দু’দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির স্রোতে মুহুরী-সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফেনীর পরশুরাম-ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এরমধ্যে ফুলগাজী-পরশুরামে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় দুই উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম ডুবে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। তিন উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আটকা পড়া মানুষদের নিরাপদে আনতে চলছে উদ্ধার অভিযান। যোগ দিচ্ছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। উদ্ধার কাজ করছে বিজিবি।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে মুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র নিশ্চিত করেছে। তীব্র পানির স্রোতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শহর থেকে নদীপথ না থাকায় নৌকার সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে অন্য পরিবহনে করে নৌকা নিতে হচ্ছে।
দুইবারের ধকল কাটতে না কাটতেই মুহুরি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজীতে দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশে পানি প্রবেশ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো মানুষ।
এদিকে রাত থেকে ফের ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন এটি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এমন বন্যা তারা বিগত ৪০ বছরেও দেখেননি।ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় অনেকে চৌকি উঁচু করে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচান, কেউবা ঘরের ছাদে কিংবা টিনের উপর উঠে রাত কাটিয়েছেন। কোমর সমান পানি হওয়াতে খাওয়া দাওয়া করতে পারছেন না ফুলগাজী-পরশুরামের মানুষরা। অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকাতে আত্মীয়স্বজন কিংবা প্রশাসনের কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না অধিকাংশ মানুষ।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতো পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষকে উদ্ধারেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরা অসহায় হয়ে গেছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখনো বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাড়ছে।
এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার চিথলিয়া, সলিয়া ও অলকা এলাকায় অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। রাত থেকে ফায়ারসার্ভিস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্ধার কাজ চলছে। কিন্তু নৌকার সংকট রয়েছে। পানির স্রোতের জন্য ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে স্পিডবোটের প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। পানি এখনো বাড়ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা তিনদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে দ্রুতই বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে যাচ্ছে। ফেনী শহর থেকে ফুলগাজী- পরশুরামের দিকে নদী পথ নেই। ফলে পরিবহনে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা উদ্ধারে কাজ করছে বলে জানান তিনি।