সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেফতার

নিউজ ডেস্ক:

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বুধবার (২৮ আগস্ট) দিনগত রাতে রাজধানীর গুলশানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ২২ আগস্ট টিপু মুনশি, তার স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশি ও মেয়ে তানিয়া অন্যন্যা মুনশি এবং তৃষা মুনশির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

জানা যায়, রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ আগস্ট সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার।

টিপু মুনশি ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ ও সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি টানা চারবার রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নবম জাতীয় সংসদে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে তিনি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের কোনো মন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর প্রথম আসে ১৩ আগস্ট। সেদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

১৬ আগস্ট রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি থেকে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

১৬ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকেও গ্রেফতার করা হয়। জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। তাকে নিউমার্কেট থানার হকার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

১৯ আগস্ট সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

২০ আগস্ট রাতে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য কথিত ইয়াবা গডফাদার আবদুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পরদিন ২১ আগস্ট ভোরে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একাত্তর টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রূপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২২ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও নিউমার্কেট হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও আটবারের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

২৩ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ভারতে পালানোর সময় আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

২৫ আগস্ট ভোরে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে আদাবর থানায় দায়ের করা পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সবশেষ ২৬ আগস্ট বিকেলে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯২ জন সাংবাদিক-আইনজীবী-ব্যবসায়ীকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার
পরবর্তী নিবন্ধআমরা দুজনই কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম: আদালতে আনিসুল হক