ফেনী প্রতিনিধি :
ভয়াবহ বন্যা কবলিত ফেনীতে একের পর এক মৃতদেহ ভেসে আসছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলাপ্রশাসন। এর আগে ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ভেসে আসছে মৃতদেহ। দুইদিনে পৃথক স্থান থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। অন্য এক নারী ও দুইজন পুরুষের পরিচয় মেলেনি। বন্যার পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
জেলাপ্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, মৃতদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় মিলেছে। বাকী ৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি । নিহতদের মধ্যে ফেনী সদরে ৩ জন, দাগনভুঞা ২ জন, ফুলগাজীতে ৭ জন, সোনাগাজীতে ৬ জন, ছাগলনাইয়াতে ৩ জন ও পরশুরাম উপজেলার ২ জন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলার সদর, ফুলগাজী ও সোনাগাজী উপজেলার পৃথক স্থান থেকে নতুন করে চার জনেদ মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলের দিকে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। মরদেহটি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাটে কিল্লার দিঘির পশ্চিম পাশ থেকে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া রজব বিবি (২৩) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রজব বিবি উপজেলার উত্তর ধর্মপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু মিয়ার মেয়ে। পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন দুপুরে ও সন্ধ্যায় সোনাগাজীতে মুহুরী প্রকল্প ও চর আবদুল্লাহ এলাকা থেকে আরও দুটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। অন্যজনের ৩০ বছর। তাদের পরনে লুঙ্গি ছিল। উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ওই দিন উপজেলার চরসাহাপুর এলাকায় জানাজা শেষে একজনের দাফন করা হয়। অর্ধগলিত আরেকটি মরদেহ চরদরবেশ ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম এলাকায় জানাজা শেষে দাফন করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে দুই মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদ্বীপ রায়। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছি। পুলিশ অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়দের মাধ্যমে দাফন সম্পন্ন করেছে।
জেলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে পরশুরাম উপজেলার উত্তর ধনীকুন্ডা এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে সাহাব উদ্দিন (৭২), একই উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৪২), ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুর গ্রামের শাকিলা আক্তার (২২), উত্তর করইয়া গ্রামের বেলালের ছেলে কিরণ (২০), দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রাজু (২০), কিসমত বাসুড়া গ্রামের আবুল খায়ের (৫০), লক্ষ্মীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ তারেক (৩২), শনিরহাট গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে রজবের নেছা (২৫),পূর্ব দরবারপুরে ইউসুফ(৬০),সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মাবুল হকের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২৮), ছাড়াইতকান্দি গ্রামের শেখ ফরিদের ছেলে আবির (৩), দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর করিমপুর গ্রামের নুর নবীর ছেলে নুর মোহাম্মদ মিরাজ (৮ মাস) এবং জয়লস্কর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে জাফর ইসলাম (৭), ছাগলনাইয়া থানার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের কুরফুলের নেছা(৭৫) ও মধ্যম নিশ্চিতা গ্রামের মোঃ আইয়ুব খান(৬০)।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যায় ২৩ জন নিহতের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।