নিউজ ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকের যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এখানে কোনো মালিক নেই। তাই তাদেরকে সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করা হবে হবে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এসব কথা জানান।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে ঋণ অনিয়ম আগে দেখিনি জানিয়ে গভর্নর বলেন, এরকমভাবে, এত বিস্তৃতভাবে, সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। বিশ্বে আমি এর চেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি আর দেখিনি। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমাদের জন্য এটা একটি শিক্ষনীয় মডেল। তবে এটা এড়িয়ে চলতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের গঠিত নতুন বোর্ড সম্পর্কে গভর্নর বলেন, ইসলামী ব্যাংকের যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে বসব। তাদেরকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। তারা আমাদের একটি কর্মপরিকল্পনা দিবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। কাজ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বোর্ড এখানে কোনো মালিক নেই। তাই তাদেরকে সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করব। প্রত্যেকেই যেন ইফেক্টিভলি এবং নির্মমভাবে তাদের কাজ করে।
এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংকের লেনদেন ঋণ এলসি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠানটি নামে বেনামে থাকা বিভিন্ন জমি সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার। তাই রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এ মুহূর্তে এস আলম গ্রুপের জমি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এ গভর্নর।
গভর্নর আরো বলেন, ইতোমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আরো কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। যদি তারা ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে তাদেরকেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হবে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই তিন মাস মূল্যস্ফীতি নাও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই সাইট ঠিক হলে মূল্যস্ফিতী এমনিতেই কমে আসবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলারও বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালীসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকেই আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলার বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, একসঙ্গে সবাই টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংক টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে এখন না ওঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর। আমরা ইতোমধ্যেই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে তবে একটু সময় লাগবে। এতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অতিরিক্ত সুদের লোভেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক আপনারা এইসব ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখেছিলেন। এখন একসঙ্গে সবাই মিলে টাকা তুলতে গেলে হবে না। যতটুকু না তুললেই নয় ততটুকু তোলেন, এর বেশি নয়।
পূর্বের মতো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, সরকার টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংকে অবৈধ সুবিধা দেবে না। আমানতকারীদের আস্থা ব্যাংকগুলোকেই ফেরাতে হবে। এখন টাকা ছেপে আমানতকারীদের সহযোগিতা দিলে পুরো বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তাই এখন আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার কোনো বিকল্প নেই।