নিউজ ডেস্ক :
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় জয়পুরহাটের কলেজ শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশাল (১৮) নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা সদর থানায় এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে জয়পুরহাট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে এদিন দুপুরে জয়পুরহাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নিয়ে থানাকে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত নজিবুল সরকার বিশালের বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামে। তিনি পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। মামলার আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২ জন সাবেক সংসদ সদস্য, ৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩ জন মেয়র, জয়পুরহাট পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর, ৯ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রহিম, জেলা আওয়ামী লীগের সমাকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক রেজা, জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কুমার সাহা, সহ-সভাপতি জাহিদুল আলম বেনু, জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুদ রেজা, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অশোক কুমার ঠাকুর, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে পূর্ব থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নের্তৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ সময় মামলার ১৪ জন আসামির হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, পেট্রোল বোমা, ককটেল ও পিস্তল ছিল। আর অপর ১৫ জনসহ অজ্ঞাত আসামির হাতে ছিল রামদা, ধারালো ছোরা, হাসুয়া, লাঠি, লোহার রড ও হকিস্টিক। এসব নিয়ে আসামিরা ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামলা করে। ওই সময় ১০ থেকে ২০ নম্বর আসামি ককটেল, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আর মামলার ৮ নম্বর আসামি আব্দুর রহিমের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে নজিবুল সরকার বিশালসহ আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোঁড়ে।
এ সময় বিশাল গুলিবিদ্ধ হন এবং অনেকে গুরুতর জখম হন। বিশালের এমন অবস্থা দেখে উত্তেজিত হয়ে আব্দুর রহিমকে ধাওয়া করলে তিনি দৌড়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে যায়। তখন উত্তেজিত জনতা তাকে এলাপাথাড়ি মারধর করে। এরপর বিশাল ও আব্দুর রহিমকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসার অবনতি হলে বিশালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার উদ্দেশ্যে নেওয়ার পথে অবস্থার আরও অবনতি হলে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি থাকায় বিশালের লাশ স্থায়ী ঠিকানায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া জয়পুরহাট সদর থানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ফলে থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জয়পুরহাট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের নির্দেশে রাতে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হলো; যার মধ্যে ১৪টি মামলাতেই হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।