নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, আমরা কখনো জোর করে কর আদায় করবো না। আমাদের যে কর আইন, রুলস-রেগুলেশন দেওয়া হয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে পরিপালন করে কর আদায় করবো। যাতে করে কারো ওপরে জুলুম না হয়। আপনি যদি ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাহলে বুঝবেন এই জুলুমের দায় কিন্তু একান্তই আপনার। করদাতাদের স্বস্তিটুকু দিতে হবে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে ‘অর্থ আইন, ২০২৪- এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে আনীত পরিবর্তনগুলোর ওপর আলোচনা হয়।
সভায় অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে কর কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও এনবিআরের প্রথম সচিব শেখ শামীম বুলবুল। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ, সদস্য (করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম। সভায় সভাপতিত্ব করেন, অ্যাসোসিয়েশনে প্রেসিডেন্ট ও কর কমিশনার (কর অঞ্চল-৬) মো. লুৎফুল আজীম।
কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরা যত আলোচনা করেছেন, এর শেষে গিয়ে উপসংহার হলো এনবিআর পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতি বাজেট করছি। ঋণ বাড়ছে। আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের ওপর আমরা দেনার দায় চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। একইভাবে করদাতারা নিশ্চিত হতে চায়, তারা যে কর দিচ্ছেন তা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে যেন কোনো অপচয় না হয়। প্রত্যেকটি টাকা যেন সঠিক ব্যবহার হয়। আমাদের অনেক টাকা অপচয় হয়, অপব্যয় হয়। এ কারণে করদাতারাও বিরক্ত হন। উন্নত দেশের করদাতারা যে ধরনের সেবা পান, সে ধরনের সেবা আমরা সরকারের কাছ থেকে পাই না। সেদিকেও আমরা এখন খেয়াল করবো।
তিনি বলেন, আপনারা কষ্ট করে যে রেভিনিউ আয় করেন, সেটার সঠিকভাবে ব্যবহার হয় কিনা তা জনগণ আপনাদের কাছে জানতে চান। আমার মনে হয়, সেই পরিবর্তনের ধারাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ব্যয়ের দিকটায় আমরা আরো সচেতন হবো। আমরা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, বিশেষ করে কর বিভাগে আমরা যারা আছি। প্রত্যেকে জনগণের পয়সায় পড়াশোনা করেছি। তাদের কাছে আমাদের অসীম ঋণ। প্রতি মুহূর্তে আপনার এই জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে। আমার বাবা-দাদা কিন্তু আমার পড়াশোনার খরচ দেয়নি। এদেশের জনগণের টাকায় আমি পড়াশোনা করেছি। তারা যখন আমার কাছে আসবেন, তাদেরকে যথাযথ সম্মান ও সার্ভিস আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৫ লাখ। দেশে ৪-৫ কোটি লোক কর্মে নিয়োজিত আছেন। এদের কাজ দিলো কারা? প্রাইভেট সেক্টর। সুতরাং তাদের ফ্যাসিলেটেড করতে হবে।
আইনের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার হবে দুই ধরনের। একটা হচ্ছে হিউজ ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার হয়ে গেছে, এটাকে রক্ষা করা। আরেকটা হচ্ছে, কর ব্যয় কাভার করা জন্য আমরা ট্যাক্সপেয়ারের উপরে অতিরিক্ত দায় চাপিয়ে দিচ্ছি, সেটাকে ঠিক করা। দ্বিতীয়টাকে ঠিক করতে গেলে আমাদের প্রচুর রেভিনিউ লস হবে। এটা করার আগে যদি আমরা ট্যাক্স স্ল্যাব যেটা করেছি, প্রচুর রেভিনিউ ছাড় দিয়েছি, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
কর কর্মকর্তাদের নিজের রিটার্ন অনলাইনে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আয়কর নির্দেশিকায় অনলাইন রিটার্ন পূরণের একটা অংশ থাকতে হবে। কিন্তু আমরা এবার তা করতে পারি নাই। রিটার্ন ফিজিক্যালি ও অনলাইন, এই দুইভাবে দেওয়া যায়। আপনারা প্রত্যেকে নিজের রিটার্নটা নিজে অনলাইনে দেবেন। এর কারণ হচ্ছে, আপনার কাছে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ফোন আসবে যে অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারছি না। আমরা এই এই প্রবলেম হচ্ছে। আপনি নিজে যদি অনলাইনে রিটার্নটা না দেন, তাহলে কিন্তু আপনি তাদের হেল্প করতে পারবেন না। আমাদেরকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
আইনের ইংরেজি ভার্সন বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আইনকানুনগুলো বিজনেস ফ্রেন্ডলি করতে হবে। ২০১২ সালে মূসক আইন হয়েছে বাংলায়। ক্রস বর্ডার বিজনেসের কারণে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যাদের প্রতিদিন ভ্যাট দিতে হয়, ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। গতবছর আয়কর আইন, ২০২৩ ও কাস্টমস আইন, ২০২৩ হয়েছে। মূসক আইন হয়েছে ১২ বছর হলো। আমরা এখনো এই আইনের ইংরেজি ভার্সনের গেজেট করতে পারিনি। বিদেশি ট্যাক্সপেয়াররা যারা বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন তারা কীভাবে প্ল্যান করবেন, তারা তো বাংলা আইন পড়বেন না, বুঝবেন না। আমি বলেছি, আগামী এক মাসের মধ্যে এই তিনটা আইনে অথেনটিক ইংরেজি ভার্সন আমরা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ট্যাক্সপেয়ার আপনার ক্লাইন্ট। ট্যাক্সপেয়ারকে সেই ধরনের সার্ভিস প্রদানের চেষ্টা করবো। সরকারি কর্মচারীদের যে ইমেজ সংকট আছে, ইমেজ সংকটটা যত দ্রুত সম্ভব রিস্টোর করবো।
সভাপতির বক্তব্যে মো. লুৎফুল আজীম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের মাঝে আয়করের সংস্কার প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ করকে একটা জায়গায় নিতে সংস্কার লাগবে। আমরা অটোমেশন চাই। কোনো অফিসারের এর বিরোধিতার সুযোগ নাই। অটোমেশনের বিকল্পও নাই। এসময় লুৎফুল আজীম অটোমেশনের পাশাপাশি কর কর্মকর্তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণেও জোর দিয়ে বলেন, এখানে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হবে।