নিউজ ডেস্ক: নেটওয়ার্ক সাইটগুলোর জন্য স্থানীয়ভাবে লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করতে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি চীনা প্রযুক্তি-জায়ান্ট হুয়াওয়ের সঙ্গে একটি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের অভ্যন্তরীণ বাজার ধরার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের।
ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ জানান, কোম্পানিটি ভবিষ্যতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ইলেকট্রনিক গ্যাজেটে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
বর্তমানে ৯টি মোবাইল টাওয়ার অপারেটর সারাদেশে ৪৫ হাজার মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার বা বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) পরিচালনা করে। এসব অপারেটর বছরে ৪৮ ভোল্ট ১০০ অ্যাম্পিয়ার-আওয়ারের প্রায় ৫০ হাজার ইউনিটের সমতুল্য লিথিয়াম ব্যাটারি কেনে।
ওয়ালটনের নতুন প্ল্যান্টে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। এটির বার্ষিক সক্ষমতা হবে ৮০ হাজার ইউনিট, যা আগামী পাঁচ বছর টেলিকম শিল্পের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় বিটিএস-এর পরিষেবা বজায় রাখতে পাওয়ার স্টোরেজ প্রয়োজন হয়। তাই সৌর শক্তি এবং এফিশিয়েন্ট লিথিয়াম ব্যাটারির ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কোম্পানিগুলোর। এক্ষেত্রে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে কম কার্যক্ষম লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি।
তৌহিদুর রহমান জানান, বিটিএস-এর জন্য ব্যবহৃত ব্যাটারির ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যেই লিথিয়াম ব্যাটারি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি ৫০ শতাংশে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, টেলিকম বিটিএসের জন্য ইন্টেলিজেন্ট ব্যাটারিসহ হুয়াওয়ের উন্নত প্রযুক্তি ১৭০টি দেশে ৩৪০টি টেলিকম অপারেটর ব্যবহার করে, যা বৈশ্বিক টেলিকম এনার্জি প্রযুক্তি বাজারের এক-তৃতীয়াংশ।
ওয়ালটন ডিজি-টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মঞ্জুরুল আলম অভি বলেন, হুয়াওয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্পকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যাবে, তেমনি একটি সবুজ দেশ গঠনে অবদান রাখবে।
তিনি এ উদ্যোগকে ব্যবসায়িক সুযোগের চেয়ে বেশি বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ এটি লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার মাধ্যমে পরিবেশগত টেকসইতার প্রতি ওয়ালটনের অঙ্গীকারকে সমর্থন করে।
তৌহিদুর বলেন, হুয়াওয়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ওয়ালটন এই সপহিস্টিকেটেড বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। তিনি আরও জানান, সৌর শক্তি সিস্টেমের জন্য লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি থেকে লিথিয়ামে রূপান্তরে বিশেষ অসুবিধা হবে না।
বর্তমানে দেশীয়ভাবে কোষ [সেল] উৎপাদনে সীমাবদ্ধতার কারণে কোষ ছাড়া লিথিয়াম ব্যাটারির বাকি সব উপাদান স্থানীয়ভাবে তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে ওয়ালটন ডিজি-টেক। একটি সেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট স্থাপনের সম্ভাব্যতার জন্য কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে এ বিনিয়োগে আরও ১০০ কোটি টাকা যোগ হতে পারে।
কোম্পানির চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল আলম বলেন, স্থানীয় নির্মাতাদের সুরক্ষা দিতে আমদানি করা কাঁচামালের জন্য শুল্ক ছাড় প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বিপ্লবের নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। সৌর ফটোভোলটাইক এবং বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি-উৎস প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানির স্থান দখল করছে। লিথিয়াম প্রযুক্তির মতো শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তি ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
একটি বিটিএস-এর জন্য দুটি লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। যেগুলোর একসঙ্গে খরচ বেশি। এছাড়া লিথিয়াম ব্যাটারি কমপক্ষে তিনগুণ বেশি টেকসই এবং লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির তুলনায় ৫০ শতাংম কম কার্বন নিঃসরণ করে বলে জানান তৌহিদুর রহমান।
স্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্টগ্রামে একটি বৈদ্যুতিক যান ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা তৈরি করেছে। এ বছরের শেষের দিকে এটির উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
তবে সরকার এখনও পরিবেশবান্ধব যানবাহন বা এনার্জি স্টোরেজ ব্যবস্থার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা দিচ্ছে না।