নিউজ ডেস্ক:
সস, ভিনেগার, আইসিং সুগার, চকলেট সিরাপ, বেবিফুডসহ ১৭-২০ ধরনের আমদানিকৃত পণ্য নকল ও ভেজাল হচ্ছে বেশি। এর কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয়না সেগুলোর ওপর শুল্ক কমিয়ে আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বাজারে ভেজাল পণ্যের প্রভাব এবং জনস্বাস্থ্যে এর ক্ষতিকর দিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ইআরএফ এবং বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিসা) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরএপি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের সহায়তায় এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, এছাড়া বাজারে কারা পণ্য নকল করছে তা খুঁজে বের করতে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। সর্বোপরি বাজারে শৃঙ্খলা আনতে দীর্ঘ, মধ্যম ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
ইআরএফ এর সভাপতি রেফায়েতুল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন বাফিসার সভাপতি মোহাম্মদ বোরহান ই সুলতান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেনসহ আরও অনেকে।
সেমিনারে বাংলাদেশের বাজারে নকল পণ্য তৈরি ও প্রতিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তরা বলেন, যখন বাজারে আসল পণ্যের চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম থাকে অথবা যেটুকু সরবরাহ আছে তার মূল্য খুব বেশি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন কিছু অসাধু ব্যক্তি অতি মুনাফার আশায় নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে। আর এটি তখনই বেশি হয় যখন আমদানিকৃত পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের মূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যায়। বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করে অসাধু ব্যক্তিরা এই নকল পণ্য তৈরি করে।
তারা বলেন, বিভিন্ন ধরনের সস, বেবিফুড, ভিনেগার, চকোলেট সিরাপ, অলিভ ওয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেগুলো দেশে উৎপাদন হয়না এমন ২০০ কন্টেইনার পণ্যের চাহিদা রয়েছে বছরে। কিন্তু নকল পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন করার কারণে, এর দশ ভাগের এক ভাগ পণ্যও এখন আমদানি হয় না। এর কারণে সরকার বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সব পণ্যের উপর ট্যাক্স বসানোর আগে দেখতে হবে, লোকাল পণ্যের বাজার মূল্য ও উৎপাদন খরচ কেমন রয়েছে। সে হিসেবেই ট্যাক্স ধরা উচিত। দেশে উৎপাদন হয়না অথচ বাজারে চাহিদা রয়েছে এমন পণ্য পর্যাপ্ত আমদানি না হলে বাজারে নকল পণ্যের উৎপাদন ও ছড়াছড়ি বাড়বে। এছাড়াও নিয়মিত বাজার তদারকি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক বলেন, দেশের বাজার থেকে নকল ও ভেজাল পণ্য দূর করতে নৈতিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এই নৈতিকতার ঘাটতির কারণে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমরা উন্নত দেশ গড়তে পারিনি। অথচ আমাদের পরে স্বাধীন হয়ে অনেক দেশে এগিয়ে গেছে। গরিব মানুষ সস্তায় পণ্য খোঁজেন। আর সস্তায় পণ্য খুঁজলে নকলতো হবেই। এছাড়া শিক্ষার হার বাড়ানো ও মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাতে মানুষকে সচেতন করা সহজ হবে।
বাফিসার প্রেসিডেন্ট বোরহান ই সুলতান বলেন, স্থানীয়ভাবে শিল্প গড়ে উঠুক এবং পণ্য তৈরি হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু সেটা মানসম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু তা হচ্ছেনা। আমাদের অনেক ব্যবসায়ী মাসে ২৫-৩০ কন্টেইনার পণ্য আমদানি করতো। অধিক শুল্ক হারের কারণে এখন তারা মাত্র দুই তিন কন্টেইনার আমদানি করেন। এসব পণ্য দেশে উৎপাদনও হচ্ছে না। আবার বাজারে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহও বেড়েছে। তা হলে এতো পণ্য আসছে কোথা থেকে?
বাফিসার জেনারেল সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বলেন, যে পণ্য আমাদের আমদানি খরচ প্রতিকেজি এক হাজার টাকা বাজারে তা তিনশ থেকে চারশ টাকায় পাওয়া যায়। আসল পণ্যের তুলনায় নকল পণ্য ৫০ শতাংশ কম দামে বাজারে পাওয়া যায়। কি করে এতো কম দামে বিক্রি হয়? বড় ব্র্যান্ড কোম্পানির অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি দেখে বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
বিএফএসএর সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, গত বছর আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ৩৮১টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্ট করিয়েছিলাম। তাতে ২০ শতাংশ পণ্যই মানহীন পাওয়া গেছে। আমরা শাস্তি দেওয়ার চেয়ে মানুষকে সচেতন করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। এতে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কমে আসবে বলে আমরা মনে করি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েতুল্লাহ মৃধা। সভায় বক্তব্য প্রদান করেন ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ আরও অনেকে।