
নিউজ ডেস্ক:
নতুন মুদ্রানীতিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এর মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নর, সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথমবারের মতো মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের পটপরিবর্তন হলেও ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সেই পুরোনো চ্যালেঞ্জগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবারের মুদ্রানীতিতে।
এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- মুদ্রাস্ফীতি আরও কমিয়ে আনা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পুনর্গঠন বজায় রাখা ও ব্যাংক খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সামষ্টিক অর্থনৈতিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, এজন্য সতর্কতা ও সক্রিয় নীতি প্রনোয়োন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মুদ্রানীতির ঘোষণায় জানানো হয়, দেশে খেলাপি ঋণের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে। এতে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
নীতি সুদহার (১০ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত ২২ অক্টোবর দেশের মুদ্রানীতির অন্যতম টুল নীতি সুদহার (ব্যাংক রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়, গত ২৫ আগস্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে এটি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাস নীতি সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ বার বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার।
এদিকে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যেটা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের একই লক্ষ্যমাত্রা (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) ছিল। আর সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মে মাসের (৭.৫৫ শতাংশ) পর সর্বনিম্ন। এ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের প্রক্ষেপণের তুলনায় সামান্য কম।