
নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদ বাজার। পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে ছোট-বড় মার্কেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেট, শপিংমলে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। পিছিয়ে নেই ফুটপাতের বেচাকেনাও। তবে, গতবছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম একটু বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের বাজেটে টান পড়ছে। বাজেটের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল থেকেই মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বরের বিভিন্ন শপিংমলে, ফ্যাশন হাউজে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে ফ্যাশন হাউজগুলোতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। জুমার নামাজের পর দোকানগুলোতে লোকজন পরিবার সমেত আসতে শুরু করে। ক্রেতার ভিড় থাকলেও বিক্রি খুব বেশি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ২০ মার্চে আগে-পরে বেতন বোনাস হলে কেনাকাটা জমে উঠবে বলে ধারণা তাদের।
বিকেলে সন্তানদের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে একটি ব্র্যান্ডের দোকানে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী রেমি বাশার। মিনিট ২০ মিনিট যাচাই-বাছাই করেও বাজেটের মধ্যে মেয়ের জন্য একটি পোশাক কিনতে পারেননি তিনি।
রেমির ভাষ্যমতে, গতবার যে টাকায় নিজের জন্য, স্বামী ও তাদের ৫ বছরের মেয়ের জন্য কেনাকাটা করেছেন, এবার সেই টাকার পারবেন না।দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ হবে।
তিনি বলেন, সবখানেই দাম চড়া। ফুটপাতে ১৫০০ টাকার নিচে বাচ্চা মেয়েদের ফ্রক পাবেন না। ফ্যাশন হাউজগুলোতে পোশাকের দাম গতবারের তুলনায় ৫০০ থেকে হাজার টাকা বেশি।
কাপড়ের মান, ডিজাইন নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ না থাকলেও দাম নিয়ে চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা গেছে। বিক্রেতারাও মানছেন জামা কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি। এ জন্য তারা দুষছেন মূল্য সংযোজন কর মূসক বা ভ্যাটকে। গত জানুয়ারি মাসে জামা-কাপড়ের দোকানে দ্বিগুণেরও বেশি ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। পরে নানান সমালোচনায় ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার।
মিরপুর ২ নম্বরে টপ চয়েজ ব্র্যান্ডের কর্মচারী শাহিন শাহজাহান বলেন, দুই হাজার টাকার পণ্যে ২০০ টাকা ভ্যাট আছে। কাপড়ের কাঁচামালের দামও বাড়তি। সব পণ্যের দাম বেড়েছে এটা সঠিক নয়। নতুন কয়েকটি পণ্যের দাম একটু বেশি।
বাজেটের সঙ্গে পোশাকের দাম মিলছে না, মার্কেটে এমন ক্রেতা দেখা গেলো বেশি। ছেলেদের সুতি, এমব্রয়ডারি, সিকুয়েন্স, স্প্যানডেক্স, লিনেন পাঞ্জাবির দাম ১৫০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে। আর কাবলি সেট, ডিজাইনার পাঞ্জাবি ৬ হাজার থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দোকানভেদে মেয়েদের টপস, ওয়ান-পিস, টু-পিস, থ্রি-পিস, জাম্পস্যুট, ওয়েস্টার্ন দুই হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় মিলছে। শিশুদের জামা-কাপড়ের দামও চড়া।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাকের দাম বাড়তি মনে হওয়ায় কেউ কেউ অর্ধেক কেনাকাটা করেছেন, কেউ এখনো দামদর জানার মধ্যেই আছেন। পরিবারে যারা উপার্জনক্ষম আছেন তারা এখনই কেনাকাটা করেননি। গরম শুরু হওয়ায় সুতি কাপড়ের মধ্যে হালকা কাজের জামাকাপড় কিনছেন ক্রেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাহমিনার সঙ্গে কথা হয় মিরপুর ১ নম্বর মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে। তিনি বলেন, এবারের ঈদটা পড়েছে গরম ও শীতের মাঝামাঝি। দিন প্রচণ্ড গরম পড়ে। এ জন্য সুতি ও হালকা রঙের পোশাক খুঁজছি। ঈদের রাতে বের হওয়ার জন্য ভারী কাজের পোশাক কিনতে পারি।
ক্রেতারা বলছেন, জামা-কাপড়ের জন্য বাসা থেকে যে বাজেট নিয়ে এসেছেন সেই টাকায় পোশাক কিনতে পারছেন না। বাড়তি ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
মিরপুর শপিং সেন্টারে রাকিব হাসান নামের একজন ক্রেতা বলেন, গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম কিছুটা বেশি। তবে অনেক ঘুরেও বাজেটের মধ্যে কিনতে পেরেছি। যদিও দামের তুলনায় পোশাকের মান ও নকশা দুটোই কম মনে হয়েছে।
পাঞ্জাবি কিনতে আসা কয়েকজন তরুণ ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পাঞ্জাবির দাম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা বেশি।
মিরপুর রূপনগরের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি। ফ্যাশন হাউজ থেকে ৩৭০০ টাকায় পাঞ্জাবি কিনলাম এবার। এ ধরনের পাঞ্জাবি গতবার ছিল ২২০০-২৩০০ টাকা।
দুই মেয়েকে নিয়ে মিরপুর ২ নম্বরের একটা ফ্যাশন হাউজে কেনাকাটা করতে দেখা যায় ব্যবসায়ী তারেক আদনানকে। তিনি বলেন, বাচ্চাদের কেনাকাটা শেষ করতে পারিনি। সবার জন্য কেনাকাটা করে আমি কিনবো। তিন হাজার টাকার নিচে কোনো পাঞ্জাবি নেই। একটু ভালো মানের পাঞ্জাবি সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিচে পাওয়া যায় না।
মিরপুর ১ নম্বরের আর্টিসান ব্র্যান্ডের সিনিয়র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার গাজী মাহবুব রনি জাগো নিউজকে বলেন, বেশিরভাগ পণ্যের দাম প্রায় আগের মতোই রয়েছে। এখানে ছেলেদের জামা-কাপড় বেশি বিক্রি হয়। কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে।
ঈদ কেনাকাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেনাকাটা শুরু হয় ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকে। আজ ক্রেতাদের ভিড় বেশি, কেনাকাটাও হচ্ছে। আবার ২৬ তারিখ থেকে ঈদের ছুটি। বিশাল ছুটি শুরু হবে। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে কেনাকাটা জমে উঠবে।
জমে উঠেছে ফুটপাত ও মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে মিরপুর ১ নম্বরের প্রধান সড়ক ও অলিগলির ফুটপাতের কেনাকাটা। এসব স্থানে মিলছে সব ধরনের জামা ও জুতা। ঘরের প্রয়োজনীয় ও ঘর সাজানোর সব ধরনের উপকরণ। ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ফুটপাতে বিক্রি শুরু হয় ইফতারের পর। ক্রেতা বেশি হওয়ায় একদামেই পণ্য বিক্রি করছেন তারা।