
নিউজ ডেস্ক:
ফের টানা দরপতন প্রবণতা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সেইসঙ্গে কমছে লেনদেনের গতি। শেয়ারবাজারের এ টানা দরপতন ও লেনদেন খরার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে ভালো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। কারণ প্রতিনিয়ত মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৩ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। ফলে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে ১৬ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকে ‘এন’ গ্রুপে। তালিকাভুক্তির পর একটি আর্থিক বছর পার হলে কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘জেড’ গ্রুপে বিভক্ত হয়।
এর মধ্যে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির স্থান হয় ‘এ’ গ্রুপে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি থাকে ‘বি’ গ্রুপে। আর লভ্যাংশ না দিতে পারা কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ গ্রুপে। জেড গ্রুপের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ‘এ’ গ্রুপের ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১২৪টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘বি’ গ্রুপের ১৬টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। আর কমেছে ৫৩টি এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র তিনটির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ১৬টির কমেছে এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘জেড’ গ্রুপের ৯৯টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৫৩টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ পচা বা জেড গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার হার বেশি। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ‘এন’ গ্রুপে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমার দিনে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে ৯৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩০টির। আর ৬৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ৯ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকার। ৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এইচ আর টেক্সটাইল।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাভেলো আইসক্রিম, জেমিনি সি ফুড, শাহিনপুকুর সিরামিক, রবি, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ন্যাশনাল পলিমার এবং আলহাজ টেক্সটাইল।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৬টির এবং ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।