
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিম-মুরগির বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দেশের প্রান্তিক খামারিরা। একটি মুরগির বাচ্চা বিক্রিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৯-৫৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা থাকলেও উৎপাদক কোম্পানির কাছ থেকে খামারিদের সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। একইসঙ্গে গত ২ মাস ধরে ডিমের দাম কমিয়ে রাখার ফলে অনবরত লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারিদের। যার আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রমজানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিম-মুরগির বাজার। দাম কম থাকায় স্বস্তির কথা বলা হলেও আসল পরিস্থিতি ভিন্ন।
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে ডিম উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ডিম উৎপাদন করছেন। কিন্তু তাদের প্রতিটি ডিমে ৩ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। সে হিসেবে গত ২ মাসে ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন একটি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা। এরপরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাম ৪৯-৫৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা আরও ভিন্ন। এই মুরগির বাচ্চা খামারিদের কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। এই অস্বাভাবিক খরচের কারণে প্রান্তিক খামারিরা পণ্য উৎপাদন করেও খরচ উঠাতে পারছেন না। বাংলাদেশের পোল্ট্রিখাত একসময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন সিন্ডিকেট, কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, মুরগির বাচ্চা ও ফিডের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি এবং বাজারের অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে দেশের পোল্ট্রি শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ঈদ সামনে রেখে মুরগির দাম বাড়ানো হলেও, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিতে পারে। আমরা মনে করছি, ঈদের পর ডিম-মুরগির বাজারের সংকট আরো বড় আকার ধারণ করবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোম্পানির বাণিজ্যিক খামারের তুলনায় প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। অথচ কোম্পানিগুলো মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন করেও তারাই পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফলে প্রান্তিক খামারিদের বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে।
সুমন হাওলাদার বর্তমান বাজার পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে একটি ডিম উৎপাদনের খরচ হচ্ছে ১০-১০ দশমিক ৫০ টাকা। আর খামারিরা ৭-৮ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার ফলে প্রতি ডিমে ৩ টাকা লোকসান হচ্ছে। একইভাবে, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৫৫-১৭০ টাকা। কিন্তু বাজারে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিনা তাদের পণ্য বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। বর্তমানে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সিন্ডিকেট পুরো দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারও সিন্ডিকেটের হাতে। যদি এই পরিস্থিতি চলতেই থাকে, তবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এমন পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য দ্রুত সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয় এবং সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হতে বাধ্য। ডিম-মুরগির বাজারের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এছাড়া, ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফেরাতে, ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, বড় কোম্পানির একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। একইসাথে প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সঠিক নীতিমালা ও সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।