
নিউজ ডেস্ক:
প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ানোয় আতঙ্কে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। তবে আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) আতঙ্ক কেটে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ কমে ক্রেতার আধিক্য দেখা যায়। এতে বড় উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ২ শতাংশ। এছাড়া ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। অথচ একদিন আগে বাজারটিতে ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে এবং প্রধান মূল্যসূচক কমে ৩ শতাংশ। একই দিনে বাজার মূলধন কমে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বড় দরপতনের পর শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হলেও মতিঝিলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কাফনের কাপড় পরে করা এই বিক্ষোভ মিছিলের নাম দেওয়া হয় ‘কাফন মিছিল’। শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষে আয়োজন করা এই কাফন মিছিল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদের অপসারণের দাবি জানানো হয়।
দুই সপ্তাহ আগে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ভারতের এই হামলার পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এ হামলায়ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ১৪৯ পয়েন্ট কমে যায়। এছাড়া বাজার মূলধন কমে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হলেও ভারতের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের উত্থান হয়।
এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের বড় উত্থানের দেখা মেলে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সবকয়টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়ে দেনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলিয়ে ডিএসইতে ৩৭৭ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০টির। এছাড়া ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২১২টির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ২টির দাম কমেছে। এছাড়া একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৮০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে ২টির দাম কমেছে এবং ২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬টির এবং ৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডেরই দাম বেড়েছে।
এভাবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮২০ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। ১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- কেডিএস এক্সেসরিজ, মিডল্যান্ড ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার এবং বেক্সিমকো ফার্মা।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।