বাড়ছে স্থানীয় বিনিয়োগকারী, থামছে না বিদেশিদের ছাড়ার প্রবণতা

নিউজ ডেস্ক:

বাড়ছে স্থানীয় বিনিয়োগকারী, থামছে না বিদেশিদের ছাড়ার প্রবণতা বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই মন্দা প্রবণতা চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা।

২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার মিছিল এখনো অব্যাহত।সর্বশেষ এপ্রিল মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ১০০টির বেশি। আর চলতি বছরের চার মাসে কমেছে ৩০০টির বেশিবিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার এই প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে। এরপর গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত তাদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজারের বেশি।বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছাড়লেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। আর হাসিনা সরকার পতনের পর দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে ২০ হাজারের বেশি।

বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।এই সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৬টি। যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ২১ হাজার ৩৩৮টি। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিও হিসাবে বেড়েছে ২০ হাজার ৫০১টি। অন্তর্বর্তী সরকার যেদিন দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয়, সেদিন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৫টি।

আর সর্বশেষ এপ্রিল মাসে বেড়েছে ১ হাজার ২৫২টি।ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে এই সরকারের ৮ মাস পার হয়েছে। হাসিনার সরকার পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে পতনের পাল্লা ভারী হয়েছে। শেয়ারবাজারে মন্দা দেখা দিলেও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।অবশ্য সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৬ হাজার ৩৬০টি। ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি। অর্থাৎ চলতি বছরে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৩৩১টি। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই কমেছে ১৩৪টি।অপরদিকে হাসিনা সরকার পতনের সময় বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৭ হাজার ৮৪টি। আর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিন ছিল ৪৭ হাজার ৮১টি। অর্থাৎ বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে কমেছে ৭২১টি।বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার এই প্রবণতা চলছে আরও আগে থেকেই।

২০২৩ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমছে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ১৫২টি।বিদেশিদের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪টি। আর ২০২৪ সাল শেষে ছিল ১৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২টি। অর্থাৎ চলতি বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৬২টি।

অপরদিকে হাসিনা সরকার পতনের সময় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। আর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিন ছিল ১৬ লাখ ৪ হাজার ৬৫৮টি। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ২০ হাজার ৬৬৬টি।হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি।

আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৬টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ৮৪ হাজার ১৫৫টি।এদিকে বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫৮টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ১৮ হাজার ৯২৪টি।অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪ হাজার ৩২৬টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭২টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৮৫৪টি।হাসিনা সরকার পতনের পর নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে।

বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৭১২টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৫২টি। সে হিসাবে গত ৮ মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৫৬০টি।বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৭ হাজার ৩৪৫টি, যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিল ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর একক নামে বিও হিসাবে বেড়েছে ২৩ হাজার ৬৬৮টি।অপরদিকে বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩৯টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯টি। অর্থাৎ গত ৮ মাসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৮৯০টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবারাকা পতেঙ্গার আয় বেড়েছে ১২৩ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধসোনার রেকর্ড দামের পর বড় দরপতন