
নিউজ ডেস্ক:
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)-এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব। এরপরও নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পরের দিনই দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের পর প্রথম কার্যদিবস মঙ্গলবার (৩ জুন) প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তবে অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সূচক সামান্য বেড়েছে।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এই প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারের বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বাজেটকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে আখ্যায়িত করেছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারা।
ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমে এক বার্তা পাঠিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে বাজেটে উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি কর সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর উৎসে করের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের পার্থক্য বৃদ্ধি করে ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য করপোরেট করের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৭.৫০ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বাজেটে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন বাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখবে এবং এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, ইস্যুয়ার কোম্পানি, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি দিকনির্দেশনার বিষয়ও গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনার মধ্যে পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি এবং নেতৃত্বস্থানীয় দেশীয় ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়েরও উল্লেখ ছিল।
অন্যদিকে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার হ্রাস এবং লেনদেনের ওপর উৎসে কর হ্রাস ইত্যাদি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এমন অভিমত দিলেও প্রস্তাবিত বাজাটের পর সোমবার শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৯টির। আর ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেন খরা প্রকট হয়েছে। বাজারটিতে মাত্র ২২৯ কোটি ৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ বার ডিএসইতে আড়াইশ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
এর আগে গত ২৫ মে ডিএসইতে ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার লেনদেন হয়। তারপর গত ২৯ মে ডিএসইতে ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এছাড়া চলতি মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুন ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে টানা ১৬ কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেনের ঘটনা ঘটলো।
এমন লেনদেনের খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেনে হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার। ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফাইন ফুড, ওরিয়ন ইনফিউশন, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি, ফু-ওয়াং ফুড, মালেক স্পিনিং এবং স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।