নিজস্ব প্রতিবেদক, দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবস সামান্য দরপতন হলেও গতকাল ব্যাপক দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
একের পর এক দরপতনের ঘটনা ঘটছে দেশের শেয়ারবাজারে। দিন যত যাচ্ছে পতনের মাত্রা ততো বড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেড়শ’ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরের খরচ সংগ্রহ করার জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজার। আর একটি অংশ কম দামে শেয়ার কেনার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। এসব কিছু মিলেই শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হচ্ছে।
তারা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন শেয়ারবাজারে দরপতন হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। অর্থনীতিও ভালো অবস্থানে রয়েছে। করোনার ধকল কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো ব্যবসা করছে। মানুষের জীবনযাত্রা এখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই বিক্রির চাপ কমলেই শেয়ারবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা গড়ানোর আগেই প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এমন ক্রেতা সংকট অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। এমনকি লেনদেনের সময় যত গড়াতে থাকে ক্রেতার সংকট ততো বাড়তে থাকে। ফলে লেনদেনের শেষদিকে এসে দেড়শ’ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে যায়।
একের পর এক প্রতিষ্ঠানের এমন দরপতন হওয়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৭৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩৭টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫২৩ কোটি ৯৫ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৫৭ কোটি ৪৬ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারের এই দরপতনের বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমান পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, ঈদের খরচ যোগাড় করার জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। এটার কারণে এই দরপতন হতে পারে। তাছাড়া এখন শেয়ারবাজারে দরপতন হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। দেশের অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থা রয়েছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, যেভাবে বিক্রির চাপ ছিল সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম কার্যকর না থাকলে আজ আরও অনেক বড় দরপতন হতো। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মের কারণে এখন একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারছে না। এতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬৪ পয়েন্ট পড়ে গেছে। যদি সার্কিট ব্রেকারের স্বাভাবিক নিয়ম কার্যকর থাকতো তাহলে সূচক দুইশ’পয়েন্ট পড়ে গেলেও অবাক হতাম না।
তিনি বলেন, ঈদের খরচ যোগাড় করার জন্য কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করছেন এটা সত্য। তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী আতঙ্কে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। আবার বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আতঙ্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। ফলে পতনের মাত্রা বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে গেছে। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে দরপতন হতে থাকে বাজারে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হবে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেহ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত দ্রুত স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
এদিকে বড় দরপতনের দিনে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ২৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জিনেক্স ইনফোসিস, বাংলাদেশ ল্যাম্প, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সোনালী পেপার, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৪৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৯টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।