মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহে চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দুই কার্যদিবস উত্থান হলেও আর ২ কার্যদিবস পতন হয়েছে। আরে এতে করে সাপ্তাহ শেষে দেখা গেছে পতনের পাল্লাই ভারি। সপ্তাহটিতে শেয়ারবাজারের সব সূচকই কমেছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর পতন হয়েছে। কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেনও। আর সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ২৪ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে ডিএসইতে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮০টির। আর ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৬ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১১৬ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১১ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯১ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচক এবং ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত বাছাই করা সূচকের পাশাপাশি টানা দুই সপ্তাহ কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গেলো সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৯ শতাংশ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ১২ কোটি ৯১ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গত সপ্তাহে পহেলা বৈশাখের কারণে শেয়ারবাজারে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ৭৭ কোটি ৩৩ লাখ দুই হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জিনেক্স ইনফোসিস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাহি অ্যালুমেনিয়াম এবং জেমিনি সি ফুড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ০১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭২ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮৬ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৯ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯০৭ টাকা বা ১৬ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৪.৮৪ পয়েন্ট বা ০.৬৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৬৬.৯০ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ৮১.০২ পয়েন্ট বা ০.৬৯ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ১৮.৯৯ পয়েন্ট বা ০.১৩ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৬.২৩ পয়েন্ট বা ০.৪৩ শতাংশ এবং সিএসআই ৭.৪৩ পয়েন্ট বা ০.৬০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৬১৯.২৯ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৫৫.৪৭ পয়েন্টে, এক হাজার ৪৪১.৪২ পয়েন্টে এবং এক হাজার ২২৬.৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৪টির বা ২২.২২ শতাংশের দর বেড়েছে, ২৩৪টির বা ৭০.২৭ শতাংশের কমেছে এবং ২৫টির বা ৭.৫১ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।